নিজস্ব গ্রাহকদের চাপেই সরে যেতে হলো বোয়িংয়ের শীর্ষ কর্তাদের

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান কোম্পানি বোয়িংছবি: এএফপি

পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত বোয়িংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিদায় নিচ্ছেন। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এয়ারলাইনসের কর্তাদের বিদ্রোহের মুখে পদ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বোয়িংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যাঁরা পদ ছেড়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী ডেভ ক্যালহুন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, বোয়িংয়ের গ্রাহক অর্থাৎ বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থার কর্মকর্তারা বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী ডেভ ক্যালহুনকে ছাড়া একটি বৈঠকের জন্য রীতিমতো বিদ্রোহ করেছিলেন। তাঁদের মানসিকতা বুঝতে পেরে বোয়িংয়ের পর্ষদ আগেভাগেই পরিবর্তন আনে।

গত সপ্তাহে বোয়িংয়ের ম্যাক্স উড়োজাহাজ ব্যবহারকারী বিভিন্ন বিমান পরিচালনা সংস্থা বোয়িংয়ের পর্ষদের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানায়। তারা মূলত সংস্কারকাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ জানাতে এই বৈঠকের দাবি করে। তবে বোয়িংয়ের চেয়ারম্যান ল্যারি কেলনার বহুপক্ষীয় বৈঠকের বদলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাল্টা প্রস্তাব দেন। এরপর শীর্ষ কর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, এ বছরের শেষ নাগাদ অবসরে যাবেন উড়োজাহাজ নির্মাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী ডেভ ক্যালহুন। সোমবার প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া বোয়িং কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেনসের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্ট্যান ডিলও পদে থাকছেন না।

এখন শীর্ষ কর্তাদের বিদায়ের পর জেট বিমানের সরবরাহ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে বোয়িংয়ের গ্রাহকদের দাবিদাওয়া অব্যাহত আছে। তাঁরা চাইছেন, উৎপাদন খাতে দীর্ঘ সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, এমন একজন মানুষকে প্রধান নির্বাহী পদে নিয়োগ দেওয়া হোক। এয়ার কানাডার সাবেক প্রধান নির্বাহী কালিন রভিনেসকু বলেন, বোয়িংয়ের গ্রাহক ও যাত্রীরা এখন দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের কথা চিন্তা করছে, নিছক ছোটখাটো বা স্বল্প মেয়াদি পরিবর্তন দিয়ে তা সম্ভব হবে না।

এয়ার কানাডার প্রধান নির্বাহী রয়টার্সকে আরও বলেন, একটা সময় আসে, যখন আপনার পক্ষে আর এই ভান করে থাকা সম্ভব নয় যে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। এটাই এখন সময়ের দাবি, সব বিমান পরিবহন সংস্থার পক্ষ থেকে এখন সম্ভবত এ কথাই শোনা যাচ্ছে।

চলতি সপ্তাহের সোমবার শীর্ষ কর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেদিন ক্যালহুন কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, তিনি কিছুদিনের জন্য পদ ছেড়ে যাচ্ছেন। সেদিন তিনি আরও বলেন, যেসব সমস্যা হয়েছে, কোম্পানি সেগুলো মেরামত করার চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে বোয়িং আবার স্থিতিশীল হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে তাঁর এই মন্তব্যের বিষয়ে বোয়িং আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

এই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত মানুষ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো বোয়িংয়ে পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর।

২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমান ভেঙে মারা যান ১৮৯ জন। এর কয়েক মাস পরেই ইথিওপিয়ান উড়ান সংস্থার ওই ম্যাক্স বিমানই ভেঙে পড়ে মারা যান ১৫৭ জন। এরপরই ম্যাক্স বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক শোরগোল তৈরি হয়। অনেক বিমান সংস্থা ম্যাক্সের উড়ান বন্ধ করে দেয়।

এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর অব্যবহৃত একটি দরজা খুলে পড়ে যায়। এ ঘটনার পর আবারও বোয়িংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। তার জেরেই এবার শীর্ষ কর্তাদের পদ ছাড়তে হলো।