দারুণভাবে ফিরে এসেছে চীনের হুয়াওয়ে

হুয়াওয়েরয়টার্স

২০২৩ সালে চীনের বড় প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ে আবার জোরালোভাবে ফিরে এসেছে, যদিও কোম্পানিটি মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের সবচেয়ে বড় বলি হয়েছিল।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, চীনের সেনজেনভিত্তিক কোম্পানিটি গত শুক্রবার জানিয়েছে, ২০২৩ সালে তাদের ৯৯ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় হয়েছে। মূলত কোম্পানিটির ইলেকট্রনিকস পণ্য প্রত্যাশাতীত বিক্রি হওয়ায় ২০২৩ সালে তারা রাজস্ব আয়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

২০১৯ সালে হুয়াওয়ে ১২৩ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করেছিল, অর্থাৎ তারা এখনো আগের সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি।

বছরের শেষভাগে কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান কেন হু বলেন, ‘টানা কয়েক বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফলে আমরা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারছি; আমরা ব্যবসার মূলধারায় অনেকটাই ফিরতে পেরেছি।’

২০২৩ সালের আগস্টে হুয়াওয়ে মেট ৬০ প্রো নামের এক স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে আসে। এই স্মার্টফোন রীতিমতো বাজার মাত করে দেয়। উন্নত প্রযুক্তির এই স্মার্টফোন বাজারে আসার পর এই খাত–সংশ্লিষ্ট মানুষেরা অবাক হয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও হুয়াওয়ে কীভাবে এত উন্নত ফোন তৈরি করতে পারল, তা নিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি হয়।

কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের তথ্যানুসারে, হুয়াওয়ে এই ফোন দিয়ে চীনের বাজারে অ্যাপলের বাজার হিস্যা এক ধাক্কায় কমিয়ে দিতে পেরেছে। সেপ্টেম্বরের শেষে অর্থাৎ বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে চীনের বাজারে হুয়াওয়ের হিস্যা ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়; বছরের প্রথম প্রান্তিকে যা ছিল ১০ শতাংশ। একই সময় স্মার্টফোনে বাজারে অ্যাপলের হিস্যা ২০ থেকে কমে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান কেন হু বলেছেন, এই ফোনের ব্যবসা প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে, তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।

২০১৮ সালের মার্কিন–চীন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত স্মার্টফোনের বিশ্ববাজারে হুয়াওয়ের স্থান ছিল দ্বিতীয়। কিন্তু বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে এই কোম্পানি অনেকটাই মার খায়।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতিপ্রণেতারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন, হুয়াওয়ে তাঁদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাঁদের অভিযোগ, চীন সরকার এই কোম্পানির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে পারে। হুয়াওয়ে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করেছে।

২০২৩ সালের শুরু থেকেই হুয়াওয়ে বলে আসছিল, তারা এখন আর সংকটে নেই। বরং যুক্তরাষ্ট্র যেসব প্রযুক্তি ও উপকরণ রপ্তানিতে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তার বিকল্প তারা পেয়েছে।

হুয়াওয়ে মেট ৬০ প্রোতে কিরিন চিপস নামের এক উন্নত মানের চিপ ব্যবহার করা হয়েছে। কাউন্টার পয়েন্টের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চলতি বছর এই চিপের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করে এই ফোনের উৎপাদন বাড়াতে পারবে হুয়াওয়ে।

বিশ্লেষকেরা বলেছেন, গত মঙ্গলবার নোভা নামের মধ্যম মানের আরেকটি স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে আসছে হুয়াওয়ে। এই ফোনের দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় তা বাজারে জনপ্রিয়তা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান কেন হু আরও বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমের কারণে আমরা টিকে গেছি, কিন্তু আমাদের সামনে এখনো অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ আছে। ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য বাধার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে।’