এত কিছুর পরও ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি

শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের কারসাজি নিয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে হিনডেনবার্গ রিসার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর গ্রুপটির মালিক গৌতম আদানি চরম বেকায়দায় পড়েন।

গৌতম আদানি

ভারতের অর্থনীতি আকারের দিক থেকে এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। দেশটির অর্থনীতি কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারত সরকার এখন সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

যেহেতু এ অর্থনীতিতে ধনকুবেরদের বড় অবদান রয়েছে, সেহেতু দেশের চলমান অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে তাঁদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। এনজেসিএম নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভারতের এসব ধনকুবের তথা বিলিয়নিয়ারের মধ্য থেকে শীর্ষ ১০ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে।

এনজেসিএমের বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছেন আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। বৈশ্বিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের কারসাজি নিয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর গ্রুপটি চরম বেকায়দায় পড়ে। তাদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে ব্যাপক পতন ঘটে।

আরও পড়ুন

ফলে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনীর অবস্থান থেকে গৌতম আদানি ৪০ নম্বরে নেমে যান। ইতিমধ্যে তিনি অবশ্য ২৬ নম্বরে উঠে এসেছেন। এখন তাঁর সম্পদের নিট মূল্য ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় ১১ লাখ কোটি রুপি, আর বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে)।

বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন সমীক্ষার তথ্য পর্যালোচনা করে এনজেসিএম ভারতীয় শতকোটিপতিদের তালিকাটি তৈরি করেছে। এতে প্রত্যাশিতভাবেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকেশ আম্বানি। তাঁর সম্পদের নিট মূল্য ৮ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার, যা ভারতের মুদ্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি রুপি এবং বাংলাদেশের প্রায় ৮ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো।

এনজেসিএমের তালিকায় তৃতীয় স্থান পাওয়া শিব নাদারের সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে থাকা সাইরাস পুনাওয়ালা এবং সাবিত্রী জিন্দাল ও তাঁর পরিবারের সম্পদমূল্য যথাক্রমে ২ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার ও ২ হাজার ৫০ কোটি ডলার।

তালিকাটির ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে থাকা শতকোটিপতিদের মোট সম্পদের মূল্য এ রকম: রাধাকিশান দামানি—১ হাজার ৮৯০ কোটি ডলার, দিলীপ সাংঘভি—১ হাজার ৭৩০ কোটি ডলার, সুনীল মিত্তাল ও তাঁর পরিবার—১ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার, কুমার বিড়লা—১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার এবং লক্ষ্মী মিত্তাল—১ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার।

আরও পড়ুন

গৌতম আদানির ফুলেফেঁপে ওঠা

নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে গৌতম আদানির কোম্পানিগুলো সরকারের সঙ্গে অবকাঠামো ও জ্বালানি খাত নিয়ে বেশ কিছু চুক্তি করার সুযোগ পায়। আদানির রিয়েল এস্টেট বা আবাসন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পণ্য উৎপাদন, অবকাঠামো, খনি সম্পদ উত্তোলন—এসব ব্যবসা রয়েছে।

ব্যবসা বাড়ছে মুকেশ আম্বানির

রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি

ফোর্বস ম্যাগাজিনের অতিধনীদের তালিকায় বিশ্বে নবম স্থানে আছেন। টেলিযোগাযোগ, খুচরা পণ্য বিক্রি (রিটেইলার), পেট্রোকেমিক্যাল, তেল ও গ্যাসসহ বিভিন্ন বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি।

অন্য অতিধনীদের কার কী ব্যবসা

এনজেসিএমের তালিকায় থাকা তৃতীয় থেকে দশম অবস্থানে থাকা ধনকুবেরদের ব্যবসা ও পরিচিতি তুলে ধরা হলো। তৃতীয় স্থানে থাকা শিব নাদার এইচসিএল টেকনোলজিস ও শিব নাদার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। শিক্ষা খাতে ভর্তুকি দিতে তিনি শিব নাদার ফাউন্ডেশনে ৬৫ কোটি ডলার দান করেছেন।

সাইরাস এস পুনাওয়ালা হলেন সাইরাস পুনাওয়ালা গ্রুপের চেয়ারম্যান এমডি। তাঁর সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া হলো বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এবং তাঁর আরেক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পুনাওয়ালা ফিনকর্প।

সাবিত্রী দেবী জিন্দাল একজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তিনি ওপি জিন্দাল গ্রুপের চেয়ারপারসন ও মহারাজা অগ্রসেন মেডিকেল কলেজ, আগরোহার সভাপতি। তিনি ভারতের সবচেয়ে ধনী মহিলা।

রাধাকিশান শিবকিশান দামানি হলেন অ্যাভিনিউ সুপারমার্টসের প্রতিষ্ঠাতা, যেটি ভারতে খুচরা বিক্রেতাদের রাজা হিসেবে সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানটির ২২১টি ডিমার্টস স্টোর রয়েছে। এ ছাড়া তিনি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এবং তামাক ও সিমেন্ট কোম্পানির মালিক।

দিলীপ সাংঘভি সান ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগ রয়েছে।

সুনীল ভারতী মিত্তাল একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী, সমাজসেবী ও ভারতী এন্টারপ্রাইজের চেয়ারপারসন ও প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর রিয়েল এস্টেট, টেলিযোগাযোগ, শপিং মল, কৃষি ও খাদ্য, বিমা, আতিথেয়তা খাতে ব্যবসা রয়েছে।

আরও পড়ুন

কুমার মঙ্গলম বিড়লা হলেন আদিত্য বিড়লা গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি ভারতে ভ্যান হিউসেন, অ্যালেন সোলি, আলট্রা টেক সিমেন্ট ও প্যান্টালুনের মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর মালিক।

লক্ষ্মী নিবাস মিত্তাল হলেন মিত্তাল স্টিলসের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী কোম্পানি আর্সেলর মিত্তালের নির্বাহী চেয়ারম্যান। ২০০৫ সালে লক্ষ্মী মিত্তাল ফোর্বস–এর তালিকায় বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী হয়েছিলেন।