ভিয়েতনাম পারলেও বাংলাদেশ পারছে না

গত ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বাস্তবে মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, কিন্তু তা কমিয়ে দেখানো হচ্ছে—এমন বিতর্কও আছে। অথচ ভিয়েতনাম, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশের চেয়ে কম। গত অক্টোবরে ভারতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৫ দশমিক ৭১ এবং ভিয়েতনামে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।

ভিয়েতনামের মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্ধেক হওয়ার বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য শুধু বৈশ্বিক সংকটকে দায়ী করলে হবে না। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতি এবং কীভাবে তা পরিচালনা করা হয়েছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম দশকের পর দশক ধরে কাঠামোগত সংস্কার করেছে। সেটির সুফলই এখন তারা পাচ্ছে।

অনলাইনে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: উদ্বেগের জায়গা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে ভূমিকা নিতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকঋণের সুদ ৯ শতাংশ। সাময়িক ভিত্তিতে করা এই সুদহার দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেমিনারে বলা হয়, চলমান অর্থনৈতিক সংকটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। তাদের খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিতে হচ্ছে। তবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার হলে মাছ-মাংস কেন ‘বিলাসী পণ্য’, এটাই একটা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভিয়েতনামের তুলনা তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ২০০০ সালে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের এফডিআই প্রায় সমান ছিল। ২০০৪ সাল থেকে ভিয়েতনামে এফডিআইয়ের পরিমাণ অনেকটা খাড়াভাবে বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশ তার ধারেকাছেও ছিল না। বর্তমানে জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের এফডিআই আসার হার দক্ষিণ এশিয়া, নিম্নমধ্যম আয় কিংবা স্বল্পোন্নত দেশের গড়ের চেয়েও কম।

অনুষ্ঠানে সেলিম রায়হান বলেন, এফডিআই বাড়াতে না পারলে অর্থনীতির ভঙ্গুরতা থেকেই যাবে।

অর্থনীতির চলমান সংকটের মধ্যে দেশের রপ্তানি আয় গত দুই মাস টানা কমেছে। তবে রপ্তানির থলেতে বৈচিত্র্যময় পণ্য থাকলে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করা যেত বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বাড়লেও তাতে রপ্তানি ও বাণিজ্যের হিস্যা কমছে।

২০০১ সালে জিডিপিতে রপ্তানির হিস্যা ছিল ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত বছর সেটি কমে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ২০০১ সালে জিডিপিতে বাণিজ্যের হিস্যা ছিল ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ। গত বছর সেটি কমে ২৭ দশমিক ৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এসব ভালো কোনো লক্ষণ নয়।

রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আমদানি নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে সেমিনারে বলা হয়, চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি থাকলেও গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ঋণপত্র খোলা কমেছে সাড়ে ৮ শতাংশ। এটি ভালো খবর হলেও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি কমেছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমবে।