‘বাপ–দাদার’ সম্পত্তি নিয়ে শতকোটিপতি হয়েছেন আরও ৯১ জন
অতি ধনীরা এখন রেকর্ড হারে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সম্পদ রেখে যাচ্ছেন। সেই সম্পদের উত্তরাধিকার হয়ে অনেকেই শতকোটিপতির তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে ৯১ ব্যক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে শতকোটিপতি হয়েছেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের সূত্রে এ তথ্য দিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান। সংবাদে বলা হয়েছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছর উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে এক-তৃতীয়াংশ। শুধু তা–ই নয়, ২০১৫ সাল থেকে ইউবিএস এ গবেষণা শুরুর পর এবারই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ব্যক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে শতকোটিপতি হয়েছেন।
যে ৯১ ব্যক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে শতকোটি ডলারের মালিক হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ছয়জন হলেন নিপ্পন পেইন্টের সিংহভাগ শেয়ারের সাবেক মালিক ও সিঙ্গাপুরের অন্যতম ধনী ব্যক্তি গো চেং লিয়ানের নাতি। গত আগস্ট মাসে ৯৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তাঁর ছয় নাতির মধ্যে ছয়নজনই এখন উত্তরাধিকার সূত্রে শতকোটিপতি।
ইউবিএসের তথ্যানুসারে, চলতি বছর বিশ্বে শতকোটিপতির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৯১৯ জন, ২০২৪ সালে যা ছিল ২ হাজার ৬৮২ জন।
উত্তরাধিকার সূত্রে যেমন অনেকে শতকোটিপতি হচ্ছেন, তেমনি অনেক মানুষ নিজ যোগ্যতায়ও শতকোটিপতি হচ্ছেন। ইউবিএসের তথ্যানুসারে, চলতি বছর নিজের যোগ্যতায় শতকোটিপতি হয়েছেন ১৯৬ জন। তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৩৮৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৩৮ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার।
ইউবিএসের শীর্ষ নির্বাহী বেঞ্জামিন কাভালি বলেন, কয়েক বছর ধরেই বিশ্বে এ প্রবণতা বেড়ে চলেছে, অর্থাৎ অতি ধনীদের পরবর্তী প্রজন্মের হাতে সম্পদ স্থানান্তরের হার বেড়েছে। এই যে উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী হওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে, তা এ প্রক্রিয়ার ফল। আগামী ১৫ বছরে এ প্রক্রিয়ায় ৫ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি সম্পদের স্থানান্তর হবে, সেই দেশগুলোর মধ্যে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি।
তবে অতি ধনী বা শতকোটিপতিদের মনমর্জির ঠিক নেই। করনীতি, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও আরও উন্নত জীবনের সন্ধানে তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অভিবাসন করে থাকেন। সেটি হলে ওপরের তালিকায় নিশ্চিতভাবেই পরিবর্তন আসবে।
এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন কঠোর করার দাবি উঠেছে। ইউরোপের অনেক দেশেই দাবি উঠেছে, আন্তর্জাতিক এ অভিজাত সম্প্রদায়ের সম্পদের করারোপ করা হোক, কিন্তু তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না।
দেশে দেশে পরিবর্তনের চেষ্টা
গত রোববার সুইজারল্যান্ডের সংসদে ভোট হলো। বিষয় ছিল, যাঁরা ৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার বা তার চেয়ে বেশি সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পাবেন, তাঁদের ওপর ৫০ শতাংশ সম্পদ করারোপ করা হোক। কিন্তু সিংহভাগ সদস্যের ভোটে এ বিল বাতিল হয়ে যায়। ইউবিএসের হিসাব, আগামী ১৫ বছর এ দেশে ২০৬ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার উত্তরাধিকারীদের হাতে স্থানান্তরিত হবে।
ফ্রান্সেও একই ঘটনা দেখা গেল। ১০ কোটি ডলারের বেশি সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়নি। এদিকে ইতালি অবশ্য এসব ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।
যুক্তরাজ্যের করনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। আগে যুক্তরাজ্যে ‘নন-ডম’ নামে ব্যবস্থা ছিল। এ ব্যবস্থার অধীন দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও যদি কেউ তাঁর স্থায়ী বাড়ি বিদেশে দেখাতে পারতেন, তাহলে বিদেশে থাকা আয়ের ওপর যুক্তরাজ্যে কর দিতে হতো না। এ বছর সেই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশটির সাম্প্রতিক বাজেটে ২০ লাখ পাউন্ডের বেশি মূল্যের বাড়ির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে। এই সারচার্জকেই ‘ম্যানশন ট্যাক্স’ বলা হচ্ছে।
গত বছর স্পেন, ব্রাজিল, জার্মানি ও দক্ষিণ আফ্রিকা জি-২০ সম্মেলনে অতি ধনীদের ওপর ন্যূনতম ২ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করে। লক্ষ্য ছিল, বৈষম্য কমানো ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো। এর প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন পূর্বাভাস আছে। তবে ফরাসি অর্থনীতিবিদ গ্যাব্রিয়েল জুকমানের গবেষণায় দেখা গেছে, এই কর থেকে অতিরিক্ত ২৫০ বিলিয়ন বা ২৫ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত আদায় হতে পারে।
এই চার দেশ অন্যান্য দেশকেও এ প্রচারণায় সমর্থন দিতে আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের মতে, অতি ধনীদের ওপর এমন করারোপ ডিজিটাল অর্থনীতির করব্যবস্থা নিয়ে চলমান আলোচনার পরিপূরক হবে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বৈশ্বিক ন্যূনতম ১৫ শতাংশ কর আরোপের যে প্রচেষ্টা, এ কর তাতে আরও গতি দেবে।