অফিসের কাজ শেষে বসের ফোন উপেক্ষা করতে পারবেন অস্ট্রেলিয়ার কর্মীরা

ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আইন হচ্ছে। এ আইনের বলে অফিসের কর্মীরা কর্মসময়ের পর বসদের অযৌক্তিক ফোনকল ও মেসেজ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারবেন এবং সে জন্য তাঁদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না। বরং নতুন আইনে এমন ধারা থাকবে যে নিয়োগকর্তারা এই আইন ভঙ্গ করলে উল্টো তাঁদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

এটাকে বলা হচ্ছে, ‘রাইট টু ডিসকানেক্ট’ বা বিযুক্ত থাকার অধিকার। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার শিল্প সম্পর্কে যে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, সেই আইনের একটি অংশ হচ্ছে এই ‘রাইট টু ডিসকানেক্ট’। অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, এটি কর্মীদের অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি তাঁদের কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনতে সহায়তা করবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের আইন ইতিমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। যেমন ইউরোপের ফ্রান্স, স্পেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য কিছু দেশে কর্মীদের ফোন ও ডিজিটাল ডিভাইস বন্ধ করে রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার সিনেটরদের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যে এই আইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বা সমর্থন জানিয়েছেন। দেশটির কর্মসংস্থানমন্ত্রী টনি বার্ক গত বুধবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন। তিনি ক্ষমতাসীন মধ্যবামপন্থী লেবার পার্টির নেতা।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি সাংবাদিকদের বলেন, এই আইন হলে কর্মীদের কর্মসময়ের বাইরে বিনা পারিশ্রমিকে ওভারটাইম করানো যাবে না। মূল কথা হলো, কোম্পানি কর্মীদের ২৪ ঘণ্টার জন্য বেতন দিচ্ছে না, ফলে কেউ যদি ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে না থাকেন বা সর্বক্ষণ তাঁকে পাওয়া না যায়, সে জন্য জরিমানা করা যাবে না।

চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে এই বিল অস্ট্রেলিয়ার সংসদে পেশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিলে আরও যা যা থাকছে, তা হলো, খণ্ডকালীন কর্মী থেকে স্থায়ী কর্মী হওয়ার পথ বা প্রক্রিয়া আরও পরিষ্কার করা এবং সাময়িক কর্মী ও ট্রাকচালকদের জন্য ন্যূনতম মানদণ্ড নির্ধারণ করা।

যথারীতি এই বিলের বিরোধিতা করছেন কিছু রাজনীতিক ও নিয়োগকর্তা গোষ্ঠী। তাঁরা মনে করছেন, এ আইনে কিছু বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে এবং এর ফলে আরও নমনীয় কর্মসময় প্রণয়নের যে লক্ষ্য ছিল, তা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কর্মীদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় প্রভাব পড়বে।

তবে বামপন্থী দল অস্ট্রেলিয়া গ্রিনস এ বিলের বিষয়ে বেশ উল্লসিত; গত বছর তারাই প্রথম এর প্রস্তাব করেছিল। দলটি মনে করছে, এটি তাদের জন্য বড় এক বিজয়। গ্রিন পার্টির নেতা অ্যাডাম ব্যান্ড বলেছেন, লেবার পার্টির সঙ্গে ছোট ছোট দল ও স্বাধীন সিনেটরদের ঐকমত্য হয়েছে। তাঁরা সবাই এ বিলের প্রতি সমর্থন জানাবেন।

অ্যাডাম ব্যান্ড আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরা প্রতিবছর গড়ে প্রায় ছয় সপ্তাহ বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন। অর্থমূল্যে পরিমাপ করা হলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার বা ৬ হাজার ১৩ কোটি ডলার।

এই রাজনৈতিক নেতা বলেন, এ সময়টা বসদের জন্য নয়, বরং কর্মীর নিজের জন্য।