চীনে কার্যক্রম বাড়ানোর অনুমোদন পেয়েছে মাস্টারকার্ড

চীনের বিশাল আর্থিক বাজারে কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত অনুমোদন পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন পরিষেবাদাতা মাস্টারকার্ড। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না গত রোববার মাস্টারকার্ডকে সেই দেশে কার্যক্রম সম্প্রসারণের অনুমোদন দিয়েছে। খবর সিএনএনের

মাস্টারকার্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কার্ড ব্যবসা চালুর অনুমোদন পেয়েছে। তবে কাজটি চীনের নেটস ইউনিয়ন ক্লিয়ারিং করপোরেশনের (এনইউসিসি) সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে করা হবে।

পিপলস ব্যাংক তাদের বিবৃতিতে বলেছে, এখন থেকে মাস্টারকার্ড তার নিজস্ব ব্র্যান্ডের অধীন ইউয়ানে লেনদেনকারী চীনা ব্যাংকগুলোর কার্ড ইস্যু করতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহরে গত সপ্তাহে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর এক ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পরস্পরের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়। এর এক সপ্তাহ পরই অনুমোদন পেল মাস্টারকার্ড।

মাস্টারকার্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল মিবাচ অ্যাপেক সম্মেলনে সিইওদের একটি অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন। এই অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে টেসলার সিইও ইলন মাস্ক এবং অ্যাপলের সিইও টিম কুকও উপস্থিত ছিলেন।

ডিজিটাল লেনদেনের বিস্তৃতির মাধ্যমে বর্তমানে চীন প্রায় একটি নগদহীন সমাজে পরিণত হয়েছে। দেশটিতে এ পদ্ধতিতে বছরে প্রায় ৪৩৪ ট্রিলিয়ন বা ৪৩৪ লাখ কোটি ইলেকট্রনিক লেনদেন হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে চীনের দুই বিখ্যাত প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আলিবাবা ও টেনসেন্টের ডিজিটাল ওয়ালেট আলিপে ও উইচ্যাট। মোট লেনদেনের ৯১ শতাংশই হয় এ দুই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।

অন্য আরও কিছু বিদেশি পেমেন্ট কোম্পানির মতো মাস্টারকার্ডও চীনে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আগে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শুধু সহ-ব্র্যান্ডেড কার্ড ইস্যুর অনুমোদন ছিল মাস্টারকার্ডের। যেমন চীনের রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের কার্ড নেটওয়ার্ক চায়না ইউনিয়নপের সহযোগী ছিল মাস্টারকার্ড।

আগের নিয়ম অনুসারে, চীনের অভ্যন্তরে দেশটির মুদ্রা ইউয়ানে পেমেন্ট করতে হলে ইউনিয়নপে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কার্ডটি করতে হতো। আর মার্কিন ডলারের অর্থ প্রদানের জন্য বিদেশে কার্ডটি ব্যবহৃত হলে তখন মাস্টারকার্ডের নেটওয়ার্কে সেসব লেনদেন হতো।

তবে নিজস্ব ব্র্যান্ডে কার্ড ব্যবসার অনুমোদন পাওয়ায় এখন থেকে সরাসরি বাজার–সুবিধা পাবে মাস্টারকার্ড। এর ফলে মাস্টারকার্ড আরও অনেক বেশি লেনদেনপ্রক্রিয়া করার পাশাপাশি ফি-ও সংগ্রহ করতে পারবে।

মাস্টারকার্ড ও নেটস ইউনিয়ন ক্লিয়ারিং করপোরেশনকে (এনইউসিসি) ব্যাংক কার্ড ব্যবসার ছাড়পত্র দিতে চীনের নিয়ন্ত্রকেরা তিন বছর আগেই সম্মত হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এত দিন তা ঝুলে ছিল। অনুমোদন পাওয়ার পর গত সোমবার মাস্টারকার্ডের সিইও মাইকেল মিবাচ বলেন, এটি একটি ‘মাইলফলক’।

মাস্টারকার্ডের আগে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ২০২০ সালে প্রথম বিদেশি কোম্পানি হিসেবে চীনের বাজারে সরাসরি প্রবেশাধিকার পেয়েছিল। অনুমোদন পাওয়ার এক বছর পরই ইউয়ান লেনদেনের জন্য আমেরিকান এক্সপ্রেস প্রথম ডেবিট কার্ড চালু করে।

আরেক কার্ড পরিষেবা কোম্পানি ভিসাও ২০২০ সালের মে মাসে চীনে নিজস্ব কার্ড–সুবিধার জন্য নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি।