যেসব কারণে রাশিয়ার গাড়ির বাজার এখন চীনা ব্র্যান্ডের দখলে

রাশিয়ার ভ্লাদিভোস্টকের একটি বন্দরে জাহাজ থেকে নামানো নতুন চীনা গাড়ি
ছবি রয়টার্স।

পশ্চিমা গাড়ি ব্র্যান্ডগুলো রাশিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর দেশটিতে চীনে তৈরি গাড়ির বাজার ক্রমেই বেড়েছে। এর ওপর নির্ভর করে রাশিয়ার অস্থির গাড়ির বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল হয়েছে। বর্তমানে রাশিয়ায় চীনা গাড়ির বিক্রি অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। তবে উচ্চ আমদানি ব্যয় ও সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে এই প্রবৃদ্ধি আবার কমে যেতে পারে বলে শঙ্কাও রয়েছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, চীনের গাড়ি ব্র্যান্ডগুলোর বিষয়ে আগে রাশিয়ার নাগরিকদের অতটা আগ্রহ ছিল না। বরং পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোতেই প্রায় সবার আস্থা ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সেই পরিস্থিতি বদলেছে। যুদ্ধের জেরে একে একে রাশিয়া ছেড়ে গেছে কিংবা বাজার সংকুচিত করেছে পশ্চিমা গাড়ির ব্র্যান্ডগুলো।

এ সুযোগে সেই শূন্যতা পূরণ করছে চীনা গাড়ি নির্মাতারা। অন্যদিকে বিকল্প উপায় তেমন না থাকায় চীনের ব্র্যান্ডগুলোকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন রাশিয়ার গ্রাহকেরা। পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর আকস্মিক প্রস্থানের পর প্রায় দুই বছর অস্থিরতা ছিল রাশিয়ার গাড়ির বাজারে। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল হয়েছে।

যেমন ২০২২ সালে রাশিয়ায় গাড়ি বিক্রি প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। আর দেশটিতে গাড়ি উৎপাদন সোভিয়েত-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে কমে যায়। ২০২৩ সালেও গাড়ি বিক্রি ও উৎপাদন অনেক কম ছিল। তবে চীনা ব্র্যান্ডের গাড়ির ওপর ভর করে ধীরে ধীরে এ বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সামগ্রিকভাবে রাশিয়ায় মাসিক গাড়ি বিক্রি এখন এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

গাড়ির বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা অটোস্ট্যাট ও পরামর্শক সংস্থা পিপিকের তথ্যানুসারে, গত এক বছরে ফ্রান্সের রেনো, জাপানি নিশান ও জার্মানির গাড়ি কোম্পানি মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো বেশ কিছু ব্র্যান্ড রাশিয়া ছেড়ে গেছে। সেই সুযোগ নিয়েছে চীনের নির্মাতারা। বর্তমানে রাশিয়ায় নতুন গাড়ির অধিকাংশ আসছে চীনের হাভাল, চেরি ও গিলির মতো ব্র্যান্ডগুলো থেকে।

চলতি বছরের আগস্টে দেশটিতে চীনা ব্র্যান্ডের গাড়ির হিস্যা ৫৬ শতাংশে পৌঁছেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে যা মাত্র ১০ শতাংশের কম ছিল। গত আগস্ট থেকে রাশিয়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার ইউনিট চীনা ব্র্যান্ডের গাড়ি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে যেমন চীন থেকে আমদানি করা গাড়ি রয়েছে, তেমনি রয়েছে রাশিয়ার স্থাপন করা চীনা কারখানায় উৎপাদিত গাড়িও।

অটোস্ট্যাটের নির্বাহী পরিচালক সের্গেই উদালভ রয়টার্সকে বলেছেন, রাশিয়ার গাড়ির বাজারে স্থিরতা ফেরাতে চীনের নির্মাতারা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বর্তমানে বাজার একটি ভারসাম্য অবস্থায় পৌঁছেছে। চীনের প্রধান ব্র্যান্ডগুলো রাশিয়ায় এসেছে। গ্রাহকেরাও সন্তুষ্ট। ফলে এ খাতে তাদের (চীনা উৎপাদক) আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।
চীনের শুল্ক বিভাগের তথ্যানুসারে, গত জানুয়ারি-অক্টোবরে রাশিয়ার বাজারে চীনের গাড়ি বিক্রি ৯৪০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। আগে গাড়ি বিক্রির দিক থেকে রাশিয়ায় ১১তম অবস্থানে ছিল চীন। এখন দেশটির জন্য রাশিয়া বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হয়ে উঠেছে। গাড়ির বাজারের এমন অবস্থান চীনের ওপরে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও প্রকাশ করে।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে একটি বিক্রয়কেন্দ্রে চীনের তৈরি গাড়ি দেখছেন ক্রেতারা
ছবি রয়টার্স

চীনের ব্র্যান্ডগুলো মূলত পশ্চিমা দামি ব্র্যান্ডের চাহিদাগুলো পূরণ করছে। বিপরীতে অ্যাভটোভাজের মতো রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক কম দামি গাড়ি বাজারে আনছে। তবে রাশিয়ার উৎপাদকেরাও বড় পরিসরে দামি গাড়ি বাজারে আনা শুরু করলে চীনা ব্র্যান্ডগুলো চাপে পড়তে পারে।

তবে সার্বিক বিবেচনায় রাশিয়ার গাড়ির বাজার এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মূলত পশ্চিমা প্রযুক্তি ও দক্ষতার ঘাটতি এই খাতকে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পুনরুদ্ধারপ্রক্রিয়া চললেও অস্থিরতা যে একেবারেই কমে গেছে, এমনও নয়। ২০২৩ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাশিয়ায় মাত্র কয়েক হাজার বেশি গাড়ি তৈরি হয়েছে।

অন্য অসুবিধাও রয়েছে। ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মান অনেক কম। ফলে গাড়ি আমদানিতে অনেক বেশি খরচ হয়। এতে স্থানীয় বাজারে দাম বেশি থাকে। অন্যদিকে রাশিয়ায় মূল্যস্ফীতি এখনো অনেক বেশি। এই প্রেক্ষাপটে দেশটিতে মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে গাড়ির মতো বিলাসবহুল পণ্য কিনতে অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু দেশটিতে বর্তমানে সুদের হার অনেক বেশি। ফলে ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়েছে দেশটিতে।