জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টা, বিদেশি গৃহকর্মী নেবে দক্ষিণ কোরিয়া

অন্য দেশ থেকে গৃহকর্মী নেবে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির সরকার গতকাল শুক্রবার সিউলের এক নগর-পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, যেখানে পাইলট কর্মসূচির মাধ্যমে ১০০ জন বিদেশি গৃহকর্মী নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মূলত, নারীদের কাজে যোগ দিতে সহায়তা করার লক্ষ্যে এটা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জন্মহার বৃদ্ধি করাও তাদের লক্ষ্য, অর্থাৎ নারীরা সন্তান লালন-পালনে সহায়তা পেলে আরও সন্তান নিতে উৎসাহিত হতে পারেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের জন্মহার দ্রুতগতিতে কমছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। এ ছাড়া ঐতিহাসিকভাবে দেশটি খুব একটা অভিবাসী নিতে চায় না। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিউল শহরের মেয়র ওহ সে-হুন গত সপ্তাহে এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘বিদেশি গৃহকর্মীরা আমাদের সমাজে নবজীবন সঞ্চার করতে পারেন। বিশেষ করে নারীরা সন্তান লালন-পালনের জন্য কাজে বিরতি নেওয়ার পর আবার কাজে ফিরতে চাইলে এই গৃহকর্মীরা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন।’

দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক নারী বাড়িতে থেকে পরিবারকে সময় দেওয়ার চাপ বোধ করেন। সন্তান লালন-পালনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে সন্তান না নেওয়ারও চাপ আছে তাঁদের ওপর। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় আবার জানিয়েছে, তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে গৃহকর্মে আসার প্রবণতা কমছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, এ নিয়ে ফিলিপাইনের সঙ্গে আলোচনা চলছে; দেশটিকে তাঁরা বিদেশি গৃহকর্মীর সম্ভাব্য উৎস হিসেবে মনে করছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে তাঁরা এই পাইলট কর্মসূচি চালু করতে চান।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিদ্যমান আইন অনুসারে, বিদেশিদের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ, যেমন কোরীয় নাগরিকদের স্বামী-স্ত্রী বা যাঁরা নৃতাত্ত্বিকভাবে কোরীয়, কেবলই তাঁরাই গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে পারেন।

সরকারের হিসাব, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী কোনো পরিবারের সার্বক্ষণিক গৃহকর্মী রাখতে সেই পরিবারের মাসে ২ হাজার ৬০০ ডলার ব্যয় হবে।

মূলত, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার দেশটির ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের ধারার মোড় ঘুরিয়ে দিতে যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, বিদেশি গৃহকর্মী নিয়োগ তার একটি পদক্ষেপ।

বিশ্বের যেসব দেশে জন্মহার সবচেয়ে কম, দক্ষিণ কোরিয়া সেই দেশগুলোর একটি। ২০২২ সালে দেশটিতে জন্মহার ছিল সবচেয়ে কম। প্রত্যেক নারীর গড়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল শূন্য দশমিক ৭৮ জন, সিউল শহরে তা ছিল আরও কম—শূন্য দশমিক ৫৯।

অথচ উচ্চ আয়ের দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) দেশগুলোয় ২০২০ সালে এই হার ছিল ১ দশমিক ৫৯।

তবে সমালোচনা আছে, কোরীয় সরকার সস্তা শ্রম আমদানি করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, এই গৃহকর্মীরা দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যূনতম হারেই মজুরি পাবেন।

সিউল শহরের মেয়র ওহ সে-হুন বলেন, নিম্ন জন্মহারের সমস্যার একক সমাধান নেই। বিষয়টি হচ্ছে, এই সমস্যা মোকাবিলায় সব ধরনের সমাধানের পথ খোলা রাখতে হবে।
দেশটির নাগরিক সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। তাদের বক্তব্য, সরকারের উচিত হবে এই সিদ্ধান্ত না নিয়ে দীর্ঘ শ্রমসময় হ্রাস করা।

নাগরিক সংগঠন পলিটিক্যাল ম্যামাসের বলেছে, ‘বাবা–মায়েদের উচিত হবে সন্তান লালন-পালনে আরও বেশি সময় দেওয়া। এ কাজ আউটসোর্সে করা বা অন্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়।’