পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে রক্তপাত হলেও গতকাল দিনশেষে বাড়ল ভারতের সূচক

ভারত ও পাকিস্তানের পতাকা

পাকিস্তানে ভারতের সামরিক হামলার জেরে গতকাল বুধবার বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের বড় পতন ঘটেছে। যুদ্ধের হুঙ্কারে প্রস্তুত থাকা পাকিস্তানেও শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সংঘাত নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, যুদ্ধে অর্থনীতির বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।  

গতকাল বুধবার ভারতের শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতেই প্রধান দুটি সূচক সেনসেক্স ও নিফটির পতন ঘটে। সেনসেক্স ২০০ পয়েন্ট পর্যন্ত পড়ে যায়। তবে এরপর সময় যত গড়িয়েছে, ততই ঘুরে দাঁড়িয়েছে উভয় সূচক এবং শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে সেনসেক্স সূচক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে ৮০ হাজার ৭৪৬ পয়েন্টে উঠেছে। নিফটি সূচক বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮০ পয়েন্ট। সেই সঙ্গে নিফটি মিডক্যাপ ১০০ ও নিফটি স্মলক্যাপ ১ দশমিক ৫০ শতাংশ করে বেড়েছে। এদিন প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে। নানা অর্থনৈতিক কারণেও এই উত্থান হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। মঙ্গলবারও দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধযুদ্ধ ভাবের মধ্যে ভারতে শেয়ার সূচক পড়ে গিয়েছিল। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

এদিকে পাকিস্তানে ভারতীয় সামরিক হামলার জেরে গতকাল বুধবার বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও সূচকের পতন হয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের পতন হয়েছে ১৪৯ পয়েন্ট। এ ছাড়া ডিএসইএস সূচক ৪১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট ও ডিএস ৩০ সূচক ৪০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমেছে। মোট লেনদেন হয়েছে ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকার।

অন্যদিকে পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে বুধবার রীতিমতো রক্তপাত হয়েছে। সে দেশের দ্য ডন পত্রিকার সংবাদে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের শেয়ারবাজারের মূল সূচক কেএসই-১০০-এর পতন হয়েছে ৬ হাজার ৫৬০ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো নয়। এই বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস বলেছে, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়লে পাকিস্তানের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। বিদেশি ঋণ পাওয়া দেশটির পক্ষে কঠিন হয়ে যেতে পারে।

ভারতের শেয়ারবাজার কেন শক্তিশালী

এনডিটিভির সংবাদে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, ভারতের এই হামলা হয়েছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে। তবে হামলার তীব্রতা বাড়ানোর তেমন ইচ্ছা ভারতের নেই। এ দুই কারণে বুধবার সূচক শেষমেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জিওজিত ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ ভি কে বিজয়কুমার বলেন, পাকিস্তান কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে বিনিয়োগকারীদের। তবে বাজার আগে থেকেই জানে, এই হামলা হতে পারে। সে কারণেও তেমন একটা প্রভাব পড়বে না বলেই তিনি মনে করেন।

এ ছাড়া ভারতের শেয়ারবাজারে কয়েক দিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। সেটাকেই ভারতীয় শেয়ারবাজার অতটা আক্রান্ত না হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করেন বিজয়কুমার। তিনি বলেন, গত ১৪ অধিবেশনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৪৩ হাজার ৯৪০ কোটি রুপির শেয়ার কিনেছেন। মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো বলে বিনিয়োগকারীরা ভারতের দিকে ঝুঁকছেন।

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে ভারতের বাজার নিজস্ব অবস্থান ধরে রাখতে পারবে।
এনডিটিভির আরেকটি খবর হলো, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে একমত হয়েছে। মঙ্গলবার এ নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এই খবর ভারতের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলেছেন, ভারত এই সময় হামলা না চালালে সেনসেক্স ও নিফটির মান আরও বাড়ত।

ব্যবসায়ীদের শঙ্কা

যুদ্ধযুদ্ধ ভাবের মধ্যে কয়েক দিন ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের ব্যবসায়ী মহল তাদের শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিল। সংঘাত চললে বা দুই দেশ পুরোপুরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে বেশি ক্ষতি হবে পাকিস্তানের। ভারতকেও জের টানতে হবে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে আর্থিক অগ্রগতি থমকে যেতে পারে। বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতির হার। ফলে ভারতের ব্যবসায়ী মহলের আহ্বান ছিল, সব দিক বিবেচনা করে যেন ভারত সিদ্ধান্ত নেয়।
ভারতের বাণিজ্য সংগঠন সিআইআইয়ের সভাপতি সঞ্জীব পুরী ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, পেহেলগামের মতো ঘটনা মোকাবিলা করার সক্ষমতা ভারতের আছে। তবে জনগণের জীবন ও বাণিজ্যে এই সংঘাতের তেমন প্রভাব যেন না পড়ে, তা দেখতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সরকারের এবং কেন্দ্রের যেকোনো পদক্ষেপে সিআইআই পূর্ণ সমর্থন দেবে।

অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনও বলেছে, সংঘাত হলে ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরাও কয়েক দিন ধরে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাস করার বিষয়ে সোচ্চার। দ্য ডনের সংবাদে পাকিস্তানের করপোরেট খাতের নেতৃত্বকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এই সংঘাতে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিনষ্ট হবে। বিশেষ করে বিশ্ববাণিজ্যে যখন আঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্ব বাড়ছে, তখন এই সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তাঁরা।

পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সংঘাতের কারণে পাকিস্তানের পুঁজিবাজার, মুদ্রাবাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতিমধ্যে শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে তাঁরা বলেন, ওষুধ সরবরাহে সমস্যা হবে। কারণ, ওষুধের উপকরণের জন্য পাকিস্তান ভারতের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই উত্তেজনা চলতে থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় ক্ষতি হবে, যা এড়ানোর পথ থাকবে না।