তেলের দাম আবার বেড়েছে, চাহিদা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের

জ্বালানি তেলছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলোতে তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তেলের চাহিদা বেড়েছে, তার জেরে বেড়েছে দাম। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, আজ ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বা ৫৮ সেন্ট বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৩ দশমিক ৫৪ ডলারে উঠেছে এবং ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বা ৬৯ সেন্ট বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৯ দশমিক ৬২ ডলারে উঠেছে।

তবে সপ্তাহের বেশির ভাগ সময়জুড়ে এই উভয় জাতের তেলের দাম কিছুটা কম ছিল—ব্রেন্ট ক্রুডের দাম শূন্য দশমিক ১ শতাংশ আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম কম ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, তার আগের সপ্তাহের তুলনায়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যানুসারে, গ্যাসোলিনদের মজুত গত সপ্তাহে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা ৪৫ লাখ ব্যারেল কমেছে এবং ডিসটিলেটের মজুত ৪ দশমিক ১ মিলিয়ন বা ৪১ লাখ ব্যারেল কমেছে। মূলত বাজারে তেলের চাহিদা চাঙা—এই প্রত্যাশায় উভয় জাতের তেলের মজুত প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কমেছে।

এএনজেড রিসার্চের এক নোটে বলা হয়েছে, শীতকাল প্রায় শেষ, গ্রীষ্মকাল আসতে যাচ্ছে; অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের গাড়ি চালানোর মৌসুম শুরু হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তেলের চাহিদা আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে।

চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের অপরিশোধিত তেল আমদানি ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। তেলের আরেক অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা ভারতের তেলের চাহিদা ফেব্রুয়ারিতে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ শতাংশের বেশি এবং শেষ প্রান্তিকেও দেশটি ভালো করছে। অর্থাৎ ভারতের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি এসেছে এবং সে কারণে তেলের চাহিদা বাড়তি।

এ বছর অধিবর্ষ অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি ২৯ দিনে, এই অতিরিক্ত এক দিনের হিসাবসহ ফেব্রুয়ারিতে চীনের অপরিশোধিত তেলের আমদানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। চীন সরকার দেশটির অর্থনীতির গতি বাড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর দেশটির তেলের চাহিদা আরও কিছুটা বাড়বে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের এক নোটে বলা হয়েছে, চলতি বছর চীনের চাহিদা বাড়লেও তা ২০২৩ সালে তুলনায় কম হবে। কারণ, ২০২২ সালের শেষ দিকে কোভিডজনিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার পর ২০২৩ সালের শুরুতে দেশটির অর্থনীতিতে একধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। মানুষের যাতায়াত বেড়েছিল, সে কারণে গত বছরের শুরুর দিকে দেশটিতে তেলের চাহিদা অনেকটা বেড়েছিল।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান গতকাল বৃহস্পতিবার যে কথা বলেছেন, তাতে তেলের দামের পালে আরও কিছুটা হাওয়া লেগেছে। তিনি বলেছেন, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই পরিস্থিতি থেকে খুব বেশি দূরে নেই, যখন তাদের মনে হবে, এখন নীতি সুদহার কমানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলেছেন, মার্কিন ডলার কিছুটা দুর্বল থাকায়, তা এত দিন কিছুটা সমর্থন জুগিয়েছে। ফলে পাওয়েলের কথায় যতটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব থাকার কথা ছিল, বাস্তবে ঠিক ততটা ছিল না।