দেড় বছর পর লেনদেন, শুরুতেই ৮০% দাম কমল এভারগ্র্যান্ডের

দেড় বছর পর আজ সোমবার হংকংয়ের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় চীনের আবাসন খাতের বৃহৎ কোম্পানি এভারগ্র্যান্ডের। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির পরও কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়াতে পারল না। বরং দেখা গেল, লেনদেন শুরু হওয়ার পরই এভারগ্র্যান্ডের শেয়ারের দাম ৮০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।

চীনের আবাসন খাতে যে সংকট চলছে, এভারগ্র্যান্ড তার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই কোম্পানি দিয়েই সংকটের শুরু। মূলত চীন সরকার আবাসন খাতের ওপর খড়্গহস্ত হওয়ার কারণে এভারগ্র্যান্ড এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। খবর বিবিসির

এর আগে গতকাল রোববার বছরের প্রথমার্ধের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এভারগ্র্যান্ড। তাতে জানা যায়, এই সময়ে কোম্পানিটির ক্ষতি হয়েছে ৪৫০ কোটি ডলার। তবে গত বছরের একই সময়ে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিল তারা। সেবার তাদের ক্ষতি হয় ৯০০ কোটি ডলারের বেশি।

যদিও এই সময়ে তাদের রাজস্ব আয় ৪৪ শতাংশ বেড়েছে; তবে নগদ জমা কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

গত বছরের মার্চ থেকে এভারগ্র্যান্ডের শেয়ারের লেনদেন বন্ধ আছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে এভারগ্র্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সম্পদ বাঁচাতে দেউলিয়া সুরক্ষার আবেদন করে।

তবে হংকং স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়া এক চিঠিতে এভারগ্র্যান্ডের পরিচালকেরা জানিয়েছেন, গোষ্ঠীর তারল্য পরিস্থিতি ও আর্থিক অবস্থানের উন্নতি ঘটাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে এই বাস্তবতায় লেনদেন শুরু হলেও যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম পড়ে যাবে, তা অনুমিতই ছিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এদিকে গত মাসে এভারগ্র্যান্ড জানায়, ২০২১ ও ২০২২ সালে তাদের সম্মিলিত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮০ বিলিয়ন বা ৮ হাজার কোটি ডলার।

শুধু এভারগ্র্যান্ড নয়, সামগ্রিকভাবে চীনের আবাসন খাতের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। গত মাসে চীনের অন্যতম বৃহৎ আবাসন কোম্পানি কান্ট্রি গার্ডেন সতর্ক করে জানায়, বছরের প্রথমার্ধে তাদের ৭৬০ কোটি ডলার ক্ষতি হতে পারে।

এই বাস্তবতায় ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস কান্ট্রি গার্ডেনের ঋণমান অবনমন করে।

ঋণ সংকট

চীনের বেসরকারি খাতের ঋণ বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সে কারণে ২০২০ সালে বড় বড় আবাসন কোম্পানিগুলোর ঋণসীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

এর আগে বড় বড় কোম্পানিগুলো আগ্রাসীভাবে ঋণ নিয়েছে। এভারগ্র্যান্ডের ঋণ ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এই ঋণ কোম্পানির সম্প্রসারণে তেমন একটা কাজে লাগেনি। একপর্যায়ে কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের ১২০ কোটি ডলারের একটি কিস্তি দিতে পারেনি তারা।

এ বাস্তবতায় কোম্পানিটি ঋণদাতাদের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে।

এভারগ্র্যান্ডের মতো কোম্পানি খেলাপি হয়ে যাওয়ায় চীনের আবাসন খাতের অন্যান্য কোম্পানির ওপরও প্রভাব পড়েছে। চীনের অর্থনীতিতেও তার বড় প্রভাব পড়ছে। কারণ, দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশ আসে আবাসন খাত থেকে।