শারজা শহরে এক মাসে ৬০ কোটি ডলারের সম্পত্তি কেনাবেচা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সংযুক্ত আরব আমিরাতের তৃতীয় জনবহুল শহর শারজা। এই শহরে আবাসন খাতে লেনদেন বিপুল হারে বেড়েছে। আমিরাতের রিয়েল এস্টেট রেজিস্ট্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, গত মাসে শারজা শহরের আবাসন খাতে ৬০ কোটি ডলার লেনদেন হয়েছে। খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেস

শারজা রিয়েল এস্টেট রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট প্রকাশিত মর্টগেজ মুভমেন্ট রিপোর্টে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটিতে ২ হাজার ২০৭টি লেনদেন হয়েছে। এসব লেনদেনের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ বর্গফুট ভূমি, যার অর্থমূল্য ৬০ কোটি ডলার।

আরও পড়ুন

মোট লেনদেনের মধ্যে বিক্রয়জনিত লেনদেন ছিল ৬৪০টি; অর্থাৎ মোট লেনদেনের ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া মর্টগেজ বা বন্ধকি লেনদেন ছিল ২৯৫, যার অর্থমূল্য ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বাইরে অন্যান্য লেনদেন হয়েছে ১ হাজর ২৭২টি; অর্থাৎ মোট লেনদেনের ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাস্তবতা হলো, দুবাই এখন বিশ্বের বিলাসবহুল আবাসনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। রাশিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনীরাই দেশটিতে বিনিয়োগ করছেন। সেই তালিকায় বাংলাদেশের অনেক নাগরিকেরই নাম উঠেছে।

দৈনিক প্রথম আলোর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, শারজা, আবুধাবি, আজমানসহ বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশিরা নিজের ও অন্যের নামে ভিলা, ফ্ল্যাট, ছোট হোটেল, তারকা হোটেলসহ নানা খাতে বিনিয়োগ করেছেন। এসব বিনিয়োগে নিজেদের আড়াল করে রাখছেন অনেকেই।

এ জন্য তাঁরা বাংলাদেশের পরিবর্তে আলবেনিয়া, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব ব্যবহার করছেন। এভাবে ইউএইর কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ ‘পাম জুমেইরা’, জুমেইরা, সিলিকন ওয়েসিস, এমিরেটস হিল, দুবাই মেরিনা ও বিজনেস বের মতো অভিজাত এলাকাগুলোতেও নিজস্ব বাড়ি ও তারকাখচিত হোটেল গড়ে তুলেছেন কেউ কেউ। এসব এলাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনীদেরও সম্পদ রয়েছে।

আরও পড়ুন

বিদেশে বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশিকে ওই দেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়নি; অর্থাৎ বাংলাদেশিরা অবৈধ উপায়ে অর্থ পাচার করে আরব আমিরাতে বিনিয়োগ করছেন। দেশটি অবশ্য অর্থের বৈধতা ও মাধ্যম নিয়ে প্রশ্ন তোলে না।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, এই দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের বিনিয়োগ নিয়ে অনেক আলোচনা আছে, তবে তার সব ঠিক নয়। বাংলাদেশের নাগরিকেরা বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাঁদের অনেকে অন্য দেশের পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব নিয়েছেন। অনেকেই দুবাইয়ে থাকার জন্য বাড়ি কিনছেন। এটা অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই।

রাষ্ট্রদূত যা-ই বলুন না কেন, দুবাইয়ের ডেইরা এলাকায় বাংলাদেশিদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। এই এলাকার অনেক অ্যাপার্টমেন্ট ও হোটেলের মালিকও বাংলাদেশি। আর এ এলাকায় বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কম্পিউটার সেবা, মোবাইল রিচার্জ ও মোবাইল ফোন বিক্রয়কেন্দ্রের অনেকগুলোই হুন্ডির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব দোকানে আরব আমিরাতের মুদ্রা দিরহাম জমা দিলে তাৎক্ষণিকভাবেই দেশে থাকা তাঁদের আত্মীয়স্বজন টাকা পেয়ে যান।

আরও পড়ুন

দুবাইয়ে তিন-চার কক্ষের ফ্ল্যাট কিনতে খরচ হয় তিন থেকে চার লাখ দিরহাম, যা বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার সমান; অর্থাৎ রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোর চেয়ে দুবাইয়ে ফ্ল্যাটের মূল্য কম। ফলে চাকরির জন্য দুবাইয়ে আসা অনেক বাংলাদেশি সেখানে ফ্ল্যাট কিনেছেন। আবার বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি দুবাইয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন। এ ছাড়া অবৈধ পথে ডলার এনে দুবাইয়ে বিনিয়োগ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তারা। তবে নথিপত্রে তাঁরা অন্য নাম ব্যবহার করেছেন।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সি ৪ এডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে সম্পদ কিনেছেন ৪৫৯ জন্য বাংলাদেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাঁদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি সম্পদ ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।