চীনের জন্য স্বস্তি, টানা তিন মাস ধরে বাড়ছে ভোক্তা মূল্যসূচক

চীনরয়টার্স

এপ্রিল মাসে এ নিয়ে টানা তিন মাস চীনের ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে। উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের প্রবণতা গত মাসেও অব্যাহত ছিল। সিএনবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, এর অর্থ হলো, চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে চীনের জন্য আরেকটি ইতিবাচক পরিসংখ্যান হলো, এপ্রিল মাসে দেশটির আমদানির পরিসংখ্যানের উন্নতি। এতে বোঝা যাচ্ছে, অর্থনীতিতে গতি আনতে চীন যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিল, সেগুলো কাজে লাগতে শুরু করেছে।

সিএনবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় চলতি এপ্রিলে চীনের ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ, যদিও রয়টার্সের জরিপে ধারণা করা হয়েছিল, সে মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক বাড়বে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এর আগের মার্চ মাসে চীনের ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।

দ্য ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সু তিয়ানচেন বলেন, খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বাদ দিলে এ পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে, বাজারে চাহিদা ফিরে এসেছে, বিশেষ করে সেবার চাহিদা।

এপ্রিল মাসে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য ব্যতীত মূল্যস্ফীতির হার ছিল শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, মার্চ মাসে যা ছিল শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ; যদিও পূর্বাভাস ছিল, মূল্যসূচক উল্টো এই পরিমাণ কমবে।

চীন–বিষয়ক অধিকাংশ পর্যবেক্ষক বলছেন, চীনের চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যায়নি। এখন যে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা দীঘস্থায়ী না–ও হতে পারে। সরকারি জরিপেই দেখা যাচ্ছে, কারখানা ও সেবার কার্যক্রম গতি হারাচ্ছে। এ ছাড়া চীনের আবাসন খাতে যে সংকট চলছে, তা নিরসনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চীনের স্থানীয় সরকারগুলো অর্থায়নের সংকটে ভুগছে। এ কারণে তাদের ভর্তুকি কমানোর পাশাপাশি অন্যান্য সেবার মূল্য বাড়াতে হতে পারে। চীনের কেন্দ্রীয় সরকার বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে বিপদে পড়েছে। সে জন্য স্থানীয় সরকারগুলোকে তারা বলে দিয়েছে, যেসব প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়ন করতে হয়, সেগুলো স্থগিত অথবা বন্ধ করতে হবে।

এদিকে এপ্রিল মাসে প্রোডিউসার প্রাইস ইনডেক্স বা উৎপাদক মূল্যসূচক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে; আগের মাসে এই সূচকের পতন হয়েছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ। দেড় বছর ধরে এই সূচকের ধারাবাহিক পতন হচ্ছে।

এই বাস্তবতায় চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছে, মুদ্রানীতি আরও বেশি নমনীয়, যথাযথ ও কার্যকর করা হবে। লক্ষ্য হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে টেনে তোলার জন্য ভোক্তা মূল্যসূচক কিছুটা বৃদ্ধি করা। অর্থনীতি টেনে তুলতে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা পলিটব্যুরোর ঘোষণায় বলা হয়েছে, চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমার পরিমাণ সমন্বয় করাসহ সুদহারের মতো হাতিয়ার ব্যবহার করবে।

তবে সব বিশ্লেষকই বলছেন, অর্থনীতি টেনে তুলতে হলে চীনকে আরও বেশি নীতিসহায়তা দিতে হবে। এ ছাড়া ২০২৪ সালের জন্য চীন যে ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, অতিরিক্ত নীতিসহায়তা ছাড়া তা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।