যুক্তরাষ্ট্রে খাতা কলম কিনতেই ৪,১৫০ কোটি ডলার খরচ হবে

ডলার
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার কমে এলেও সেখানে খাতা-কলমসহ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বাড়তি। বাস্তবতা হলো, দেশটির অনেক সীমিত আয়ের পরিবারকে এ বছর নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে এসব উপকরণ কিনতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে জরিপ করেছে ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন ও প্রসপার ইনসাইটস অ্যানালিটিকস নামের দুটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান। তাদের জরিপে দেখা গেছে, এবার বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর আগে যেসব পরিবারে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছে, তাদের উপকরণ বাবদ গড়ে রেকর্ড ৮৯০ ডলার ব্যয় করতে হবে। সামগ্রিকভাবে এ বছর শিক্ষা উপকরণ বাবদ যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোকে মোট ৪১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ১৫০ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে।

জরিপের ভিত্তিতে এ সংবাদ দিয়েছে সিএনবিসি। সেখানে লয়েন সিয়ার নামের এক নারীর বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষা উপকরণের এতটা মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবারের বাজেটে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটা সঙিন যে তিনি বলেন, ‘বাজারে কেনাকাটা করতে গেলে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে যাই। এটা বড় মাথাব্যথার কারণ।’ সিয়ার বেকার বা গৃহবধূ নন, ফ্লোরিডার এক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবা ব্যবস্থাপক তিনি। তাঁরই এ অবস্থা।

বিশ্লেষকেরা বলেন, সীমিত আয়ের পরিবারগুলোর জন্য এটা দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

তবে সিএনবিসির সংবাদে ভিন্ন একটি প্রসঙ্গে আলো ফেলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এবার যে কেবল মূল্যস্ফীতির কারণেই বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে, তা নয়; বরং এ বছর আগের চেয়ে বেশি উপকরণ কিনতে হচ্ছে। এর মধ্যে উচ্চমূল্যের উপকরণও আছে। সেটা আবার এক দিক থেকে ইতিবাচক। এতে বোঝা যায়, অর্থনীতিতে মানুষের আস্থা কিছুটা হলেও ফিরেছে। সে জন্য অনেকেই এসব উপকরণ বাবদ অনেক ব্যয় করছেন, যদিও অনেক মানুষের জন্য তা বোঝা হয়ে যাচ্ছে।

এ বাস্তবতায় অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট উপকরণ বা সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের উপকরণ না কিনে উন্মুক্ত থাকতে হবে। এতে বিদ্যালয়গামী শিশুরাও খুশি থাকবে, মা–বাবার পকেটও
ঠিক থাকবে।

অন্যদিকে বড় খুচরা দোকানগুলো মানুষকে আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের প্যাকেজ দিচ্ছে। এই কাতারে আছে গ্যাপ ও কোল। ওয়ালমার্ট বলছে, তারা গত বছর যে দামে শিক্ষা উপকরণ বিক্রি করেছে, এবারও সেই দামে বিক্রি করছে। ব্যাকপ্যাকের দাম এ বছরও তারা ৬ ডলার রেখেছে। এ ছাড়া টার্গেট অনুগত গ্রাহকদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান দিয়ে বাস্তবতার পুরোটা বোঝা যাবে না। কারণ, ব্র্যান্ড, দোকান ও ভৌগোলিক অবস্থানভেদে ব্যয় ভিন্ন হতে পারে। তবে এই তথ্য দিয়ে বাস্তবতার আভাস পাওয়া যায়, অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উপকরণ কেনায় শিক্ষার্থীদের কত ব্যয় হচ্ছে।

এবার দেখে নেওয়া যাক, মহামারির আগের সময়ের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উপকরণের দাম কতটা বেড়েছে:

 কাগজ

শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হচ্ছে কাগজ। সেই সঙ্গে এখন ডিজিটাল যুগ, ফলে ট্যাবলেটও আছে এর মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রে কাগজের খরচ ২০১৯ সালের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে এবং ট্যাবলেটের দাম বেড়েছে ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ।

কলম-পেনসিল

কাগজের পর শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হচ্ছে পেনসিল, কলম, মার্কার। এর মধ্যে আবার যান্ত্রিক পেনসিলও আছে। এই সবকিছুর দাম বেড়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এসব উপকরণের দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া লিড পেনসিল ও অন্যান্য উপকরণের দাম ২৩ দশমিক ২ শতাংশ।

ব্যাকপ্যাক

শিক্ষার্থীদের যে উপকরণ দিয়ে এক পলকে চিহ্নিত করা যায়, তা হচ্ছে ব্যাকপ্যাক। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ব্যাকপ্যাকের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ; অন্যান্য কিছু উপকরণের তুলনায় যা কিছুটা কম।

এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত আয়ের পরিবারগুলো শিক্ষা উপকরণ কেনা কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এতে তাদের শিক্ষা গ্রহণ ব্যাহত হবে। পরিবারে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়বে। সর্বোপরি এই শিশুদের বিকাশ ব্যাহত হবে, ফলে ভবিষ্যতে তারা পূর্ণ কর্মক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না। অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে। সমাজে বৈষম্য বাড়বে।