পাকিস্তানের ব্রিকস জোটে যোগ দেওয়া নিয়ে টানাপোড়েন

বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকসে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে চীনের সমর্থন থাকলেও অন্য সদস্যদেশগুলো এ বিষয়ে এখনো একমত নয়।

বর্তমানে ব্রিকসের সভাপতি দায়িত্ব পালন করছে রাশিয়া। তারাও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে খুব একটা জোরালো অবস্থান নেয়নি। বরং বলা যায়, তারা একধরনের নিমরাজি। ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, সর্বশেষবার ২০২৩ সালে ব্রিকসের সম্প্রসারণ হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে আবারও এই জোটের সম্প্রসারণের সম্ভাবনা কম। এ ছাড়া ব্রিকসের অংশীদার মডেল কী হবে, তা নিয়ে এখনো পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে।

নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সদস্যদের ঐকমত্য প্রয়োজন হয়, কিন্তু পাকিস্তান জোটে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখালেও সদস্য পদ দেওয়ার বিষয়ে সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা ব্রিকসের অন্যান্য সদস্যদেশের মতো নয়। ফলে তারা এই শীর্ষ ও উদীয়মান দেশগুলোর জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে কি না, তা নিয়েও কথা তুলেছে সদস্যদেশগুলো।

তবে চীনের সমর্থনের কল্যাণে পাকিস্তান সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিওতে যোগ দিতে পেরেছে। আবার এই জোটে ভারতের অংশগ্রহণের বিষয়ে রাশিয়ার সমর্থন আছে এবং একই সঙ্গে মধ্য এশিয়ার দুটি দেশ কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তান ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সমর্থন দিয়েছে।

গত বছর অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইথিওপিয়া ও আর্জেন্টিনাকে এই জোটে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার এই জোট মনে করেছে, তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য ওই ছয় দেশের যোগ্যতা আছে। তবে পরে আর্জেন্টিনা জোটে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ব্রিকস ও এসসিওতে অন্তর্ভুক্তির মানদণ্ড এক নয়। ভারত এসসিওর প্রতিষ্ঠাতা না হলেও ব্রিকসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সহযোগী। ফলে এই জোটের সম্প্রসারণে তার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ।

রাশিয়া জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি দেশ ব্রিকস জোটে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। মস্কো মনে করছে, দেশগুলোর এই আগ্রহের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার গুরুত্ব কোথায়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর ব্রিকস জোটে অংশগ্রহণের বিষয়ে বলেছিলেন, এই দেশগুলোর আগ্রহ স্বাভাবিক। কারণ, এই জোট প্রকৃত অর্থেই গণতান্ত্রিক ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।

ব্রিকসকে অমিত সম্ভাবনার জোট বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশ্বের ৪২ শতাংশ জনসংখ্যার বাস ব্রিকসের সদস্যদেশগুলোতে। ২০৩০ সালে বৈশ্বিক জিডিপির অর্ধেকের বেশি এসব দেশ থেকে আসতে পারে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য আরও বেড়েছে। রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারছে না, সে জন্য তারা চীন ও ভারতের মতো দেশের কাছে সস্তায় পণ্য বিক্রি করছে।

ব্রিকসের সদস্যদেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা এক নয়, বরং তাদের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য আছে। তাদের পররাষ্ট্রনীতিও পৃথক। সে কারণে তাদের পক্ষে সব বিষয়ে একমত হওয়া বেশ কঠিন।