মার্কিন নীতি সুদহার ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যে কারণে কমাচ্ছে না ফেড

ফেডারেল রিজার্ভছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী থাকলেও দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আরও এক মাসের জন্য নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি কমিটির প্রথম বৈঠকে গতকাল বুধবার নীতি সুদহার অপরিবর্তিত, অর্থাৎ গত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বাজারের ধারণা ছিল, চলতি বছরে মার্চ মাস থেকে ফেড নীতি সুদহার কামাতে শুরু করবে। কিন্তু গতকাল বৈঠকের পর ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সে ধারণার প্রবল বিরোধিতা করেছেন।

তবে চলতি বছর নীতি সুদহার কমাবে না—এমন কথা বলেনি ফেড। বরং তারা জানিয়েছে, ২০২০ সালের পর এই প্রথম নীতি সুদহার কমানোর খুব কাছাকাছি চলে গেছে তারা। বিবৃতিতে ফেড বলেছে, মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানজনিত তাদের যে লক্ষ্যমাত্রা, সে লক্ষ্যে তারা আগের চেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেরোম পাওয়েল বলেছেন, প্রায় সব নীতিপ্রণেতাই মনে করেন, চলতি বছরের শেষ দিকে সুদহার কমানো যথাযথ হবে।

২০২২ সালে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের অনেক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেড়ে যায়। তখন থেকে ফেডারেল রিজার্ভ আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে। ফেডের দেখাদেখি বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এই নীতি অনুসরণ করে।

একপর্যায়ে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করলেও ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে সুদহার উঁচু পর্যায়ে বহাল রাখে। তখন থেকে ফেডের সুদহার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। গতকাল সমাপ্ত মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে না আসা পর্যন্ত কিংবা মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশের মধ্যে চলে আসবে—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনে এই প্রত্যয় সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সুদহার কমানো যথাযথ হবে না।

ফেডারেল রিজার্ভ মূলত একধরনের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিতে চাইছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার আগেই নীতি সুদহার কমানো হলে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে বলে মনে করেন জেরোম পাওয়েল। তিনি আবার এও বলেন, সঠিক সময় সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে বা সুদহার যতটুকু কমানো প্রয়োজন, ততটুকু কমানো না হলে অর্থনীতির মুখ থুবড়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার অনেকটাই কমেছে। ২০২২ সালের জুন মাসে দেশটির মূল্যসূচক যেখানে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল, গত ডিসেম্বর মাসে তা ৩ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এখনো দেশটির অনেক নাগরিক জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করছেন।

ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা এখন জানুয়ারি মাসের জন্য দেশটির কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। কাল শুক্রবার এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ২৭ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। ফলে ফেডের আগ্রাসী নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, তা অতটা হয়নি।

এদিকে গতকাল ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি–সংক্রান্ত ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের বিভিন্ন সূচক পড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ এবং প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ন্যাসডাক কম্পোজিটের পতন হয়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ।

আগামী মার্চ মাসে ফেডের মুদ্রানীতি কমিটির পরবর্তী বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে নীতি সুদহার কমানোর সম্ভাবনা নেই বলেই জেরোম পাওয়েলের বক্তব্যে জানা গেছে।