বিটকয়েনের দাম এযাবৎকালের সর্বোচ্চ

বিটকয়েনছবি: রয়টার্স

বিটকয়েনের দাম এযাবৎকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে আবার কিছুটা কমেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিটকয়েনের দাম ৬৯ হাজার ২০২ ডলারে উঠে যায়; এরপর তা ৭ শতাংশের মতো কমে ৬৩ হাজার ৪০০ ডলারে নেমে আসে। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিটকয়েনের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ৯৯৯ ডলার।

রয়টার্স জানিয়েছে, গত অক্টোবর মাসের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিটকয়েনের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ, এর মধ্যে ৪৪ শতাংশ বেড়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে।

বিটকয়েনের এই মূল্যবৃদ্ধি অবশ্য অপ্রত্যাশিত ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) চলতি বছরের শুরুতে ইটিএফের মাধ্যমে বিটকয়েনে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়ার পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, বিটকয়েনের দাম বাড়বে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করবে—বাজারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিনিয়োগকারীরা বিটকয়েনের দিকে ঝুঁকেছেন। সে জন্য বিটকয়েনের এই মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্ম অ্যাঙ্করেজ ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী নাথান ম্যাকলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বিটকয়েনের দাম এযাবৎকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার বিষয়টি ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে যুগান্তকারী ঘটনা। তিনি আরও বলেন, এত দিন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আসতে চাইতেন না। কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে; এখন তাঁরা ক্রিপ্টোর জগতে একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

১ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি বড় বিটকয়েন তহবিলে বিনিয়োগ হয়েছে ২২০ কোটি ডলার; এর মধ্যে ব্ল্যাকরকের বিটকয়েন ট্রাস্টেই বিনিয়োগ হয়েছে ২০০ কোটি ডলারের বেশি।

মূলত ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করবে—এ খবরের কারণে বিনিয়োগকারীরা ডিজিটাল মুদ্রার দিকে ঝুঁকছেন। একই সঙ্গে সোনার দামও বাড়ছে। নীতি সুদহার কমলে যুক্তরাষ্ট্রে বন্ডের সুদহারও কমে যায়, সে জন্য বিনিয়োগকারীরা এখন থেকেই অন্যান্য মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইকুইটি ক্যাপিটালের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্টুয়ার্ট কোল রয়টার্সকে বলেন, উচ্চ সুদহার ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যম হিসেবে বিনিয়োগকারীরা এখন সোনার চেয়ে বিটকয়েনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এ ছাড়া বাজারে বিটকয়েনের স্বল্পতার কারণেও বিটকয়েনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। যদিও অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন, বিটকয়েনের বাজার অনেকটা ফাটকাবাজির মতো।

তারা যা-ই বলুক না কেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন বিটকয়েনের দিকে ঝুঁকছে। সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ও ক্রিপ্টো খাতের বিনিয়োগকারী মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি সম্প্রতি ৩ হাজার বিটকয়েনে ১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিট ক্রিপ্টোর জগতে প্রবেশ করেছে। বিটকয়েনের পাশাপাশি তারা ইথার কিনেছে। ফলে ইথারের দামও বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ইথারের দাম ৪৭ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৩৫৩ ডলারে উঠেছে। ফলে তা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছে গেছে।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় বিটকয়েনের দাম বাড়লেও ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভসহ বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। এর জেরে বিটকয়েনে বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমে যায়; একই সময়ে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ এফটিএক্স ধসে পড়ে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের কয়েকটি ব্যাংক ধসে পড়ায় বিটকয়েনসহ ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের এপ্রিলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বলেছিল, ২০২৪ সালের শেষ দিকে বিটকয়েনের দাম এক লাখ ডলার স্পর্শ করতে পারে। সে সময় তারা বলেছিল, ক্রিপ্টেকারেন্সির তথাকথিত ‘শীতকালের’ অবসান হতে চলেছে।

বিটকয়েনের দাম নিয়ে এর আগেও এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। যদিও বাস্তবে দেখা গেছে, সেগুলো ফলেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকের এক বিশ্লেষক ২০২০ সালের নভেম্বরে বলেছিলেন, ২০২২ সালের নভেম্বরে বিটকয়েনের দাম ৩ লাখ ১৮ হাজার ডলারে উঠবে। কিন্তু দেখা গেল, ৬৫ শতাংশ কমে বিটকয়েনের ১৬ হাজার ৫০০ ডলারে নেমে আসে।