চীনের ২.৬% জিডিপি সংকোচন

করোনাভাইরাসের কারণে শূন্য কোভিড নীতি নামে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন।ছবি: বিবিসি

করোনাভাইরাসের কারণে শূন্য কোভিড নীতি নামে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। এতে দেশটির বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) চীনের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আগের প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) চেয়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। খবর বিবিসির

মহামারির শুরু থেকেই চীন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ কোনোভাবেই তারা সংক্রমণ ছড়াতে দেবে না। সংক্রমণ কমে গেলে বিধিনিষেধ কমানো হয়, বেড়ে গেলে আবার দেওয়া হয় কঠোর বিধিনিষেধ।

সর্বশেষ করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত এপ্রিল থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চীনের প্রধান আর্থিক ও উৎপাদন কেন্দ্র সাংহাই শহরে ছিল কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন। এ ছাড়া চীনের অন্যান্য প্রধান শহরও সম্পূর্ণ বা আংশিক বিধিনিষেধে রাখা হয়েছিল। দেশটি তার শূন্য কোভিড নীতি মেনে এসব বিধিনিষেধ দিয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১ শতাংশ। কিন্তু এই প্রান্তিক শেষে দেখা গেছে, প্রত্যাশার অর্ধেকেরও কম, অর্থাৎ মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে দেশটির অর্থনীতিতে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ টমি উ বিবিসিকে বলেছেন, মহামারি শুরুর পর এটি চীনা অর্থনীতির সবচেয়ে বাজে নৈপুণ্য। বিশেষ করে সাংহাইতে বিধিনিষেধের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

চীনের এই অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে অনেক চীনা ও বৈশ্বিক কোম্পানি। এর মধ্যে একটি হলো ব্রিটিশ বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড বারবেরি। বিধিনিষেধের কারণে ক্রেতারা বাড়িতে থাকতে বাধ্য হওয়ায় বিক্রি কমেছে তাদের।

গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বারবেরি জানিয়েছে, চীনে তাদের পণ্য বিক্রি খারাপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। প্রথম ত্রৈমাসিকে বিক্রি প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। তবে গত জুন মাসে অনেকগুলো বিক্রয়কেন্দ্র পুনরায় খুলতে পেরেছে তারা। এ জন্য তারা আগামী প্রান্তিকে ভালো করার আশা করছে।

সংক্রমণ কিছুটা কমতে শুরু করায় গত জুন মাস থেকে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে চীনের বিভিন্ন শহরে। ফলে ধীরে ধীরে গতি ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতিতে। ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ওয়ান্ডার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক জেফ হ্যালি বলেছেন, তিনি চীনের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্যে কিছু আশাব্যঞ্জক চিত্র দেখছেন। জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ হলেও বেকারত্ব ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি বেড়েছে খুচরা বিক্রি।

তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, চীনের পক্ষে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে না। কারণ, সরকার করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেই আবার কঠোর শূন্য কোভিড নিয়ম চালু করে দেবে। এতে ব্যবসা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।

শূন্য কোভিড নীতির সমালোচনাও আছে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, এই নীতি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন; তা না হলে চীনের এ কঠোর নীতি সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।