আইএমএফের ঋণ পেতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা

চরম অর্থনৈতিক–রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কাফাইল ছবি: রয়টার্স

ঋণ সংকটে বিপর্যস্ত দেশ শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেইল আউট চেয়েছে। কিন্তু যথারীতি আইএমএফের শর্তের বেড়াজালে তাদের ঋণ পেতে দেরি হচ্ছে।

তবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, আইএমএফের ঋণ পাওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করা হচ্ছে। শিগগিরই ২৯০ কোটি ডলারের ঋণ বা বেইল আউট পাওয়া যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, ‘আমরা সফলতার সঙ্গে কঠিন ধাপগুলো অতিক্রম করেছি। ফলে শিগগিরই তাদের ঋণ অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’ স্বাধীনতার পর শ্রীলঙ্কা এখন সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের মুখে আছে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে তারা।

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া’র নীতি। এই নীতি শ্রীলঙ্কায় নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই আছে। প্রকৃতপক্ষে মাহিন্দা রাজাপক্ষে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই তা ছিল। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার মোট জাতীয় ঋণ জিডিপির ১১০ শতাংশের মতো (যা নিরাপদ সীমার প্রায় দ্বিগুণ)। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ক্ষমতায় আসার আগেই শ্রীলঙ্কায় ঋণ জিডিপির অনুপাত ছিল ৮০ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কার বিদেশি ঋণ স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে বেড়েছে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে যখন প্রথম প্রেসিডেন্ট হন, অর্থাৎ ২০০৫ সালে সেই গ্রাফ হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে খুব দ্রুত ওপরে উঠে যায়। এরপর আর সেই গ্রাফ নিম্নমুখী হয়নি, কেবল মাথা চাড়া দিয়েছে। রাজাপক্ষেদের শাসনামলের সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, আগে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ বেশি ছিল, কিন্তু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল কম। মাহিন্দা বিদেশি ঋণকে অতি দ্রুত ভয়ংকর বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে যান। যার ফল এখন দেশটিকে দিতে হচ্ছে।

মোদ্দাকথা হলো, বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে শ্রীলঙ্কা বাছবিচারহীনভাবে সার্বভৌম বন্ডের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছে। এসব ঋণের সুদহার বেশি, মেয়াদও কম। ওই সব অবকাঠামো লাভজনক হওয়ার আগেই ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। সে জন্য পুঁজিবাজারে বারবার বন্ড ছাড়তে হয়েছে। আবার অবকাঠামোর অনেকগুলোই লাভজনক হয়নি। বিষয়টি শাঁখের করাতে পরিণত হয়।

আইএমএফ বলেছিল, শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতারা যদি তাদের ঋণ পুনর্গঠন করে, তাহলে দ্রুত ঋণ ছাড় করা হবে। গত মাসে ভারত এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এরপর দ্রুত বরফ গলতে শুরু করে।

শ্রীলঙ্কার মতো পাকিস্তানের অবস্থাও শোচনীয়। তারাও আইএমএফের ঋণের আবেদন করেছে। কিন্তু যথারীতি আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছে তারা। আইএমএফের ৭০০ কোটি ডলারের ঋণের প্যাকেজ পেতে মানতে হবে বেশ কিছু কঠিন শর্ত। সেসব শর্ত কার্যত ‘কল্পনার বাইরে’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

আয়কর ছাড় তুলে দেওয়া আর জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বন্ধের শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। যেগুলো মেনে নিলে সরকারবিরোধী ক্ষোভের আগুন সামাল দেওয়া যাবে না বলেই মনে করছেন শাহবাজ শরিফ। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হবে। সামনের মাসে আছে পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বেশ কয়েকটি আসনে উপনির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে আইএমএফের যাবতীয় শর্ত মেনে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে জেনেও তা মানতে কার্যত তাঁরা বাধ্য বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন শরিফ।