১১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা ব্রিটিশ তেল কোম্পানি শেলের

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাড়তি দামে জ্বালানি বিক্রি করে রেকর্ড মুনাফা করেছে ব্রিটিশ বহুজাতিক বৃহৎ তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেল। কোম্পানিটি ২০২২ সালে ৩ হাজার ৯৯০ কোটি মার্কিন ডলার মুনাফা করেছে। এ মুনাফা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ এবং শেলের ১১৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। খবর বিবিসির।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর অনেক দেশ ও বহুজাতিক কোম্পানি বিপাকে পড়লেও লাভবান হয়েছে অনেকে। বিশেষ করে যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এতে জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলো গত এক বছরে বাড়তি দামেই তেল ও গ্যাস বিক্রি করে রেকর্ড মুনাফা করেছে। ব্রিটিশ বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেল যার মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশ এই কোম্পানিটি মুনাফার দিক থেকে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, করোনার বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার পরে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের মার্চ থেকে জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এ সময় অপরিশোধিত ব্রেন্ট তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১২৮ ডলারে উঠে যায়। যদিও এরপর তা আবার কমে প্রতি ব্যারেল ৮৩ ডলারে ফিরে আসে। একইভাবে গ্যাসের দামও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর এখন অনেকটা কমেছে। তবে এই সময়ের মধ্যে বেশি দামে জ্বালানি বিক্রি করে, যা লাভ করার তা করে নেয় জ্বালানি কোম্পানিগুলো।

তবে জ্বালানি কোম্পানিগুলো রেকর্ড লাভ করলেও এতে অসুবিধায় পড়ে সাধারণ নাগরিক ও ব্যবসায়ীরা। মূল্যস্ফীতির কারণে যেখানে ব্রিটিশ নাগরিকেরা ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ব্যয় নিয়ে সংকটে রয়েছেন, সেখানে শেলের এমন মুনাফায় ক্ষুব্ধ মনোভাব জানিয়েছেন অনেকে। তাই দেশটির নাগরিকেরা শেলসহ জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ওপর আরও বেশি করারোপের দাবি তোলেন।

অন্যদিকে দেশটির বিরোধী দলগুলো বলেছে, শেলের এ রকম মুনাফা ‘আক্রোশমূলক’। সরকার জ্বালানি প্রতিষ্ঠাগুলোকে এমন মুনাফা করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এ ছাড়া তারা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরবর্তী পরিকল্পনাও বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের তেল–গ্যাস কোম্পানিগুলোর লাভের ওপর ৩০ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স ধার্য করা আছে। এ ছাড়া আরও ১০ শতাংশ সম্পূরক কর দিতে হয় তাদের। তবে যাঁরা অনেক বেশি মুনাফা করেন, তাঁরা উইন্ডফল নামে বিশেষ একধরনের করের আওতায় আসেন। তেল ও গ্যাস কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি ছিল ২৫ শতাংশ। তবে সম্প্রতি এটি বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এখন সব মিলিয়ে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হবে এসব কোম্পানিকে। শেল জানিয়েছে, ২০২৩ সালে তাদেরকে প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি কর দিতে হবে। এর মধ্যে উইন্ডফল কর দিতে হবে ১৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।

শেলের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সিনেড গোরম্যান জানিয়েছেন, ২০২২ সালে শেল বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার কর পরিশোধ করেছে। কোম্পানিটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের ১১ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে। রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই সরবরাহ বাড়ানোর জন্য গত বছর তাদের ওপর অনেক চাপ ছিল।