বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও অমূল্য হীরা কোনগুলো

হীরাপ্রতীকী ছবি

হীরা-জহরত মণি–মাণিক্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সম্ভবত চিরন্তন। একসময় রাজারাজড়া ও অমাত্যদের গায়ে হীরা-জহরতের গয়নার জৌলুশ দেখা যেত। সেই দিন বিগত হয়েছে। কিন্তু সেই আকর্ষণ রয়েই গেছে। সে কারণেই হীরার দাম আকাশচুম্বী।

দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বের দামি ও অমূল্য হীরা কোনগুলো

কোহিনূর
হীরা নিয়ে আলোচনায় প্রথমেই আসে কোহিনূরের নাম। এর যেমন রত্নমূল্য আছে, তেমনি রাজনৈতিক মূল্যও আছে। জানা যায়, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রাচীনতম হীরক খণ্ড থেকে তৈরি। কোহিনূরের অর্থ হলো আলোক পর্বত। ১০৫ দশমিক ৬ ক্যারেটের এই হীরা উপমহাদেশের গর্ব। এখনো এটি ব্রিটেনের প্রয়াত রানি এলিজাবেথের মুকুটে শোভা পাচ্ছে। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে বিশুদ্ধ হীরা। একটা সময় পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় হীরা ছিল এটি। কিন্তু এর উজ্জ্বলতা ও গুণমান বাড়াতে পুনরায় কাটিং করে ৮৬ ক্যারেটে রূপান্তর করা হয়। তবে এর ঐতিহ্য ও বিশুদ্ধতার জোর এতই বেশি যে এর দাম অনুমান করা কঠিন।

পিংক স্টার
অর্থমূল্যের দিক থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দামি হীরা হচ্ছে ‘পিংক স্টার’। এই দুর্লভ হীরা ২০১৭ সালে হংকংয়ের এক নিলামে ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি হয়েছে। পৃথিবীতে নিলামে বিক্রি হওয়া মূল্যবান পাথরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে দামি।

পিংক স্টার হচ্ছে অতি দুর্লভ প্রকৃতির গোলাপি রঙের হীরা এবং বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, এত বড় গোলাপি হীরা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনোই দেখা যায়নি। বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সাদাবির নিলামে মাত্র পাঁচ মিনিট দর–হাঁকাহাঁকির পরই ৫৯ দশমিক ৬ ক্যারেট ওজনের ডিম্বাকার হীরাটি বিক্রি হয়ে যায়। আফ্রিকার এক খনিতে ১৯৯৯ সালে এটি পাওয়া যায়। তারপর এটিকে কেটে চকচকে করতে দুই বছর লেগে যায়।

দ্য স্যানকি ডায়মন্ড
সব হীরার অর্থমূল্য সম্পর্কে জানা যায় না। কারণ, সেগুলো বিক্রি হয়নি বা হয় না বা সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা যায়নি। কিন্তু সেগুলো অমূল্য। তেমনই একটি হীরা হলো দ্য স্যানকি ডায়মন্ড। হালকা হলুদাভ বর্ণের ৫৫ দশমিক ২৩ ক্যারেটের এই হীরা অমূল্য। এটি ভারতের মোগলদের প্রিয় ছিল; এখন এটি ফ্রান্সের ল্যুভর জাদুঘরের ফ্রেঞ্চ ক্রাউন জুয়েল কালেকশনে শোভা পাচ্ছে। এই হীরা নাকি এতটাই দুর্লভ যে এখনো এর দাম নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

দ্য কিউলিনান
৩ হাজার ১০৬ দশমিক ৭৫ ক্যারেটের এই হীরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এটিকে কেটে দুই টুকরো করা হয়, যার একটি নাম কিউলিন্যান বা আফ্রিকার মহান তারা।

দ্য হোপ ডায়মন্ড
রহস্যময় এই হীরার ওজন ৪৫ দশমিক ৫২ ক্যারেট। এটিও অমূল্য। খালি চোখে একে খুব নীল দেখালেও অতি বেগুনি রশ্মিতে একে বেগুনি দেখা যায়। হীরাটি এখন ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টোরিতে প্রদর্শনীর জন্য রাখা আছে। নীলাভ বেগুনি বর্ণের এই হীরাকে অভিশপ্ত বলে মনে করা হয়।

ডি বিয়ারস সেন্টেনারি ডায়মন্ড
২৭৩ দশমিক ৮৫ ক্যারটের এই হীরার নামকরণ করা হয়েছে দে বিয়ার্স কনসোলিডেটেড মাইনসের নামানুসারে। এটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম এবং সর্ববৃহৎ বর্ণহীন হীরা। এটা এতটাই নিখুঁত যে জেমলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অব আমেরিকা একে গ্রেড ডি–তে অন্তর্ভুক্ত করে, অর্থাৎ এর ভেতরে এবং বাইরে পুরোটাই নিখুঁত।

দ্য অরেঞ্জ ডায়মন্ড
দক্ষিণ আফ্রিকার খনিতে পাওয়া যাওয়া এই হীরার আরেক নাম ফায়ার ডায়মন্ড। নাশপাতি আকৃতির এই হীরকখণ্ড বিরল প্রকৃতির। এর দাম প্রায় সাড় তিন কোটি ডলার। সাধারণ আকারের হীরার চেয়ে এটি চার গুণ।

দ্য রিজেন্ট ডায়মন্ড
এই হীরার দাম ৬১ মিলিয়ন বা ছয় কোটি ১০ লাখ ডলার। হীরার জগতে এটি প্রকৃত অর্থেই রত্ন হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজমুকুট ও রত্নভান্ডারে এটি স্থান পেয়েছে।

দ্য স্টেইনমেটজ পিংক
৫৯ দশমিক ৬০ ক্যারেট ওজনের আকর্ষণীয় গোলাপি বর্ণের এই হীরা ২০০৩ সালের ২৯ মে মোনাকোতে উন্মোচন করা হয়। হীরাটি এতটাই শক্ত যে এটি কাটতে আটজন কারিগরের ২০ মাস সময় লেগেছিল। এটির বর্তমান মূল্য ২৫ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি মার্কিন ডলার।

দ্য ব্লু মুন অব জোসেফাইন ডায়মন্ড
৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার মূল্যের এই হীরার নামকরণ করা হয়েছে হংকংয়ের এক শতকোটিপতির মেয়ের নামে। দক্ষিণ আফ্রিকার এক খনিতে এই হীরা পাওয়া গেছে। ১২ ক্যারেটের এই কুশন কাট হীরা প্রায় নিখুঁত।