অর্থনীতি চাঙা করতে নতুন যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন

চীন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

অর্থনীতি চাঙা করতে আরও একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন সরকার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলো আবারও ঋণের সুদহার কমানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও বিদ্যমান বিধিবিধান শিথিল করা হচ্ছে।
এসব পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ রাখার পরিমাণও কমানো হচ্ছে। এসব পদক্ষেপে অবশ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে আবাসন খাতে পতনের ধারা থামবে।

চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। সে কারণে বিশ্ব অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন অবশ্য সবার চোখ আবাসন কোম্পানি কান্ট্রি গার্ডেনের দিকে। এভারগ্র্যান্ডের পর চীনের এই আবাসন কোম্পানিও ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। চীনের অর্থনীতিতে আবাসন খাতের হিস্যা এক-তৃতীয়াংশের বেশি। তাই আবাসন খাতের এই সংকট দেশটির অর্থনীতির জন্য বড় শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে।

অর্থনীতিতে চাপ বৃদ্ধির কারণে চীনের সরকার এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থনীতি চাঙা করতে ঋণ নেওয়ার নিয়ম শিথিল করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার পরিমাণ হ্রাস করা হয়েছে।

এ ছাড়া বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও নিয়মকানুন শিথিল করা হচ্ছে বলে বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২১ সালের পর এই প্রথম চীন দেশব্যাপী আবাসন খাতের নিয়মকানুন শিথিল করছে। এতে বাজারে আত্মবিশ্বাস ফিরবে এবং আবাসন খাতের অধিকতর পতন ঠেকাবে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে বাজারের প্রতিক্রিয়া নির্ভর করবে কান্ট্রি গার্ডেনের পরিস্থিতির ওপর।

বৃহস্পতিবার কান্ট্রি গার্ডেন ঋণদাতাদের এক ভোট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা হলো, ৫৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঋণ পরিশোধ স্থগিত করা হবে কি না, সেই বিষয়ক ভোটাভুটি এক দিন পিছিয়ে দেয় তারা, যাতে বন্ডহোল্ডাররা ভোট দেওয়ার আগে চিন্তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় পান।

এদিকে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল শুক্রবার বলেছে, ব্যাংকগুলোর বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ রাখার হার ২০০ ভিত্তি পয়েন্ট কমানো হয়েছে। মূলত দেশটির মুদ্রা ইউয়ানের দরপতন ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

যে ঋণদাতারা শুক্রবার মর্টগেজ বা বন্ধকের সুদহার কমিয়েছে, সেগুলো হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না, চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক করপোরেশন এবং অ্যাগ্রিকালচারাল ব্যাংক অব চায়না। এই ব্যাংকগুলো বন্ধকি ঋণের সুদহার পাঁচ থেকে ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট বৃদ্ধি করেছে বলে ব্যাংকের ওয়েবসাইট সূত্রে রয়টার্স জানিয়েছে। কয়েকটি মধ্যম মানের ব্যাংকও ঘোষণা দিয়েছে, বিভিন্ন আমানতের সুদহার ১০ থেকে ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমানো হবে।

এসব পদক্ষেপে বাজারে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে এবং পরিণামে বিপর্যস্ত আবাসন খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে। শুক্রবার চীনের সিএসআই ৩০০ রিয়েল এস্টেট ইনডেক্স ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ব্লু চিপ সিএসআই ৩০০ সূচক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে।

এ ছাড়া আরও কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও বিদ্যমান ঋণের সুদহার কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে জন্য তারা আমানতের সুদহার কমানোর চিন্তা করছে।
জুন মাস শেষে চীনের মোট বন্ধকি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার কোটি ডলার, যা দেশটির মোট ঋণের ১৭ শতাংশ।

অন্যদিকে বেইজিং ও সাংহাই নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাঁরা প্রথমবার বাড়ি কিনবেন, তাঁরাও অগ্রাধিকারভিত্তিতে গৃহঋণ পাবেন, তাঁদের ঋণের ইতিহাস যেমন হোক না কেন।