ফুটবলে শুরু, এবারে ইংল্যান্ডের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে টাকা ঢালছে সৌদি আরব

ইদানীং ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেড ফুটবল দলের খেলার সময় গ্যালারিতে সৌদি আরবের পতাকা উড়তে দেখা যায়। ২০২১ সালে অক্টোবর মাস থেকে এ দৃশ্য নিয়মিত। সে সময় সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা পিআইএফ নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেডের ৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। তবে ক্লাবটির অবস্থা খুব ভালো নয়। ভক্তদের ভালোবাসা সত্ত্বেও দলটি লিগে খুব একটা ভালো করছে না।

দ্য ইকোনমিস্টের খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ফুটবল লিগে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সম্পদ তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের ফুটবলে মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগ অবশ্য শুরু হয় ২০০৮ সালে। তখন আবুধাবির শেখ মনসুর ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাবটি কিনে নেন। এরপর সেই লিগে আমিরাতের বিনিয়োগের প্রবাহ শুরু হয়।

তবে নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেডের বিক্রি হওয়া নিয়ে বিতর্ক ছিল। এমনকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন একটি ইংলিশ ক্লাব ফুটবল দলের সৌদি মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রিমিয়ার লিগের আরও ১৯টি দল তাদের সঙ্গে গলা মেলায়। শেষ পর্যন্ত এক অসম্ভব নিশ্চয়তার ভিত্তিতে নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেডের বিক্রয় চুক্তি অনুমোদিত হয়। সেটা হলো, পিআইএফ সৌদি সরকার–নিয়ন্ত্রিত তহবিল নয়।

পিআইএফের গভর্নর ইয়াসির আল হুমায়ুন নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন; একই সঙ্গে তিনি সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পুরোপুরি বাণিজ্যিক কারণে এই লেনদেনের যথার্থতা আছে।

নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেডকে পিআইএফ মাত্র ৩০ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড দিয়েছে। অথচ লন্ডনভিত্তিক ক্লাব চেলসি ২০২২ সালে ৫৪০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়েছিল। তবে এ ধরনের বিশাল দামের জন্য ফুটবল মাঠে সাফল্যের প্রয়োজন। আধুনিক ফুটবলে বিষয়টি একই সঙ্গে ক্লাবের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের বেতন ভাতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তবে তথাকথিত ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে বা আর্থিক ন্যায্যতা–সংক্রান্ত নিয়মের কারণে ক্লাবগুলোর পক্ষে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যয় খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব হয় না। যেসব ক্লাব এই নিয়ম লঙ্ঘন করবে, তাদের বড় ধরনের জরিমানা হওয়ার পাশাপাশি পয়েন্ট কেটে নেওয়ার বিধান আছে।

তবে কোনো শহরে বৈশ্বিকভাবে সফল ফুটবল দল থাকলে তা সেখানকার অর্থনীতির জন্য ভালো। নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, এ ক্লাবের কারণে ইতিমধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীরা তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করছেন। ছাত্ররা এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ করেন।

এদিকে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ বলেছে, কোনো শহরের ক্লাব যদি ইংল্যান্ডের ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়, তাহলে সেই শহরের জিডিপিতে ১ দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট যোগ হয়। ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হলে সেই শহরে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। ফলে সেখানকার হোটেল ও আতিথেয়তা খাতের সম্প্রসারণ হয় এবং তার বদৌলতে অর্থনীতিতে এই বাড়তি মাত্রা যোগ হয়।

গত বছরের মে মাসে ‘সৌদি নর্থ-ইস্ট ইংল্যান্ড ডায়ালগ’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ইংল্যান্ডের সুনির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এটি একমাত্র কমিটি। আইনি প্রতিষ্ঠান ডিডব্লিউএফের পূর্বাভাস, এ অঞ্চলে সৌদি আরবের বিনিয়োগ ২০২৪ সালে আরও বাড়বে। ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে সম্পদ খাতে বিনিয়োগ করে এখন লন্ডনের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ পাওয়া যায় বলে তারা লক্ষ করেছে। সম্পদে বিনিয়োগ থেকে বার্ষিক লভ্যাংশের হার ৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে, যেখানে পুঁজি বিনিয়োগ থেকে আসে ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত।

এমনকি সৌদি বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে নিউ ক্যাসল শহরের এক অব্যবহৃত অফিস ব্লককে ২০১টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে রূপান্তরিত করার কাজ শুরু করেছে। এ রকম আরও অনেক বিনিয়োগ পাইলাইনে আছে।

নিউ ক্যাসেল শহরের ফুটবল ভক্তদের অনেকে সৌদি আরবের পতাকা ওড়াচ্ছেন ঠিক, তবে অনেকেরই আবার পিআইএফের বিনিয়োগ নিয়ে অস্বস্তি আছে। নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেড গত দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। অনেকের মনে উদ্বেগ, খেলার মাঠের সফলতা অর্জন করতে নৈতিকতার সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে। শহরের স্থানীয় রাজনীতিকেরা বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী। যদিও অনেকের মনে উদ্বেগ, এই অর্থ যেখান থেকে আসছে তা নিয়ে।