পশিমবঙ্গে আরও ২০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করবেন মুকেশ আম্বানি

বাংলা-বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনে ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল কলকাতার উপশহর রাজারহাটের নিউটাউনে বিশ্ববঙ্গ কনভেনশন সেন্টারে
ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতায় ‘সপ্তম বাংলা বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনে’ যোগ দিয়ে ভারতের শীর্ষ ধনী ও শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতার দূরদৃস্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের জন্য পশ্চিমবঙ্গ এখন বিনিযোগের আদর্শ পীঠস্থান হয়ে উঠেছে। এই রাজ্য আমাদের কাছে বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য, যেখানে শিল্প গড়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’

মুকেশ আম্বানি জানান, তাঁর রিলায়েন্স শিল্পগোষ্ঠী আগামী তিন বছরে পশ্চিম বাংলায় ২০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে। ইতিমধ্যেই তাঁরা বাংলায় ৪৫ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছেন। এসব বিনিয়োগ এই রাজ্যের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিক্ষেত্রকে আরও উন্নত করবে। রিলায়েন্স জিও পশ্চিমবঙ্গের আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ–সেবা পৌঁছে দেবে। কলকাতা জোনে ইতিমধ্যে ৯৮ শতাংশ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে গেছে জিওর নেটওয়ার্ক। তিনি বলেন, ‘ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী যথার্থই মমতাদিকে অগ্নিকন্যা বলে উল্লেখ করেছিলেন।’

আরও পড়ুন

কলকাতার উপশহর রাজারহাটের নিউটাউনে রাজ্য সরকারের গড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিলনায়তন বিশ্ববঙ্গ কনভেনশন সেন্টারে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’ বা ‘বাংলা বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন’ শুরু হয়। আজ বুধবার এ সম্মেলন শেষ হবে দক্ষিণ কলকাতার ধনধান্য স্টেডিয়ামে।

এ বাণিজ্য সম্মেলনে মুকেশ আম্বানি তাঁর ভাষণ শুরু করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানের কলি উল্লেখ করে, আর শেষ করেন কবিগুরুরই ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন হবেই হবে’ গানের কলি দিয়ে। মুকেশ আম্বানি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, মাদার তেরেসাসহ এই রাজ্যের অনেক গুণীর নাম স্মরণ করে বলেন, বাংলা হলো ‘হেরিটেজ অব ইন্টেলেকচুয়াল’।

সম্মেলনে বিশ্বের ১৭টি দেশের নামীদামি ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, অর্থনীতিবিদ ও প্রতিনিধিরা যোগ দেন। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে রিলায়েন্স শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি, জেএসডব্লিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দাল, আইটিসির চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরী, অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, নারায়ণা গ্রুপের কর্ণধার ডা. দেবী শেঠি, জে কে গ্রুপের কর্মকর্তা হর্ষপতি সিঙ্ঘানিয়া, ইউপ্রোর অধিকর্তা রিশাদ প্রেমজি অংশ নেন। ছিলেন পোল্যান্ডের বিদ্যুৎমন্ত্রী গ্রেজর্জ টোবিজোস্কি। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া বাংলাদেশের ১০ সদস্যের শিল্পপতিদের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি রাশিদুল হোসেন চৌধুরী।

আরও পড়ুন

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্মেলনে দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বাংলায় শিল্প গড়ার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলা আজ বিনিয়োগের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাকে শিল্পে সমৃদ্ধ করা।’ তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নানা উন্নয়নমুখী প্রকল্প তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলা মানে ব্যবসা। বাংলায় রয়েছে বৈচিত্র্যের মধ্যে এক ঐক্যের সুর। এখানে সবাই ভাই ভাই, বিভেদের সুর নাই।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার সন্তান ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীকে বাংলার বাংলার দূত হিসেবে ঘোষণা করেন। এর আগে এই পদে ছিলেন বলিউড তারকা শাহরুখ খান।