একসঙ্গে প্রায় ৫০০ উড়োজাহাজ কিনতে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া

ভারতের বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া প্রায় ৫০০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার প্রাথমিক চুক্তি করেছে। বিমান কোম্পানিগুলো যে দাম আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করে, সেটি বিবেচনায় নিলে এসব উড়োজাহাজের মোট মূল্য ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি হতে পারে। এর আগে কোনো একক কোম্পানি এত বেশি উড়োজাহাজ এক সঙ্গে কেনেনি।

বিমানশিল্পের সূত্রগুলো বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে যে ভারতীয় এই বিমান কোম্পানি নতুন মালিকের অধীন নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে এবং সে লক্ষ্যেই এত বেশিসংখ্যক বিমান একসঙ্গে কেনার চুক্তি করা হয়েছে।

রয়টার্স গত ডিসেম্বরে সম্ভাব্য এই চুক্তি সম্পর্কে প্রথম জানিয়েছিল। সূত্রগুলো বলছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই বিমান তৈরির প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস এবং বোয়িং প্রায় সমানসংখ্যক বিমান তৈরি করবে। এর মধ্যে এয়ারবাস থেকে যে ২৫০টি বিমান কেনা হবে, তার মধ্যে ২১০টি হবে একক আইলের এ–৩২০ নিও এবং বড় আকারের ৪০টি এ–৩৫০ উড়োজাহাজ।

আর বোয়িংয়ের কাছ থেকে কেনা বিমানের মধ্যে থাকবে ছোট আকারের ১৯০টি ৭৩৭ ম্যাক্স, ২০টি বড় আকারের ৭৮৭ এবং ১০টি ৭৭৭এক্স উড়োজাহাজ।

এয়ারবাস এবং এয়ার ইন্ডিয়া শুক্রবারে চুক্তি সই করেছে। অন্যদিকে, বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে জানুয়ারির ২৭ তারিখে। এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য তারিখটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, এদিনই টাটা সাবেক এই রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার মালিকানা ফেরত পায়।

এয়ারবাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অন্যদিকে, রয়টার্স এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে ই–মেইল পাঠালেও তাদের পক্ষ থেকেও দ্রুত কোনো মন্তব্য আসেনি।

গত ২৭ জানুয়ারি কর্মীদের কাছে লেখা এক নোটে বিমান সংস্থাটি জানিয়েছিল যে তারা  ‘নতুন উড়োজাহাজ কেনার ঐতিহাসিক চুক্তি চূড়ান্ত’ করছে।

নিজেদের পুরোনো উড়োজাহাজগুলো বদলে ফেলার কৌশল নিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। লক্ষ্য, বিশালসংখ্যক অনিবাসী ভারতীয়দের বাজার ধরা, যাঁরা দিল্লি বা মুম্বাইয়ের মতো বড় বড় শহর থেকে চলাচল করে। এসব রুটে চলাচল করে এমিরেটসের মতো উপসাগরীয় বিমান সংস্থা, যাদের রয়েছে নতুন উড়োজাহাজ।

সরু আকারের ৪০০টি উড়োজাহাজ এয়ার ইন্ডিয়াকে আঞ্চলিক এবং অভ্যন্তরীণ রুটের বাজার ধরতে সাহায্য করবে। এসব বাজারে এখন প্রাধান্য বিস্তার করে আছে ইন্ডিগো।

এয়ারবাস থেকে প্রথমে ২৭৫টি বিমান কেনার পরিকল্পনা ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার। তবে রয়টার্সের সূত্রগুলো এই সম্ভাবনা বাতিল করে দেয়নি যে ভবিষ্যতে আরও উড়োজাহাজ কেনা হবে না কিংবা বিমান লিজ নেওয়া হবে না।

এটা অবশ্য এখনো পরিষ্কার নয় যে চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ দেওয়ার সময় অতিরিক্ত ঠিক কী পরিমাণ উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ দেওয়া হতে পারে।

এয়ার ইন্ডিয়ার এই রেকর্ড ক্রয়াদেশ তাদের বিশ্বে অন্যান্য বড় বিমান সংস্থার কাতারে নিয়ে যাবে। এ ছাড়া বিমান কেনার ক্ষেত্রে তারা প্রভাবশালীদের সারিতেও চলে যাবে। আর এসব ঘটবে এমন সময়ে, যখন ভারতে কোভিড মহামারির পর বিমান চলাচল ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার মাস্কট হলো ‘মহারাজা’। এক সময় এটি পরিচিত ছিল চমৎকারভাবে সুসজ্জিত প্লেনের জন্য। কিন্তু চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকে আর্থিক সমস্যা শুরু হলে এর সুনাম ক্ষুণ্ন হতে শুরু করে।

নতুন মালিকের অধীন এই বিমান সংস্থা আবারও দেশে–বিদেশে তাদের হারানো সুনাম ফিরিয়ে আনতে চায়। আর এ ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য হলো এটা প্রতিষ্ঠা করা যে এয়ার ইন্ডিয়ার রয়েছে চমৎকার সেবা এবং বিশ্বের সেরা উড়োজাহাজ।