চীনে দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, নীতিগত সহায়তা বৃদ্ধির তাগিদ

চীনের পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চীনে চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে অর্থনীতিতে বেশ ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে কোভিড-পরবর্তী সময়ের অর্থনীতির গতি কমে যাওয়া। এ ছাড়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য নীতিনির্ধারকদের ওপর আরও প্রণোদনা দেওয়ার চাপ বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে বেকারত্বের হার কমানো ও অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুদ্ধার করার বিশাল চাপ পড়েছে চীনা কর্তৃপক্ষের ওপর। এ বাস্তবতায় যেকোনো ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত দেশটির ঋণ এবং কাঠামোগত পরিস্থিতির জন্য আত্মঘাতী হতে পারে। খবর রয়টার্সের

আজ সোমবার চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, গত এপ্রিল-জুন সময়ে দেশটিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও রয়টার্সের এক জরিপে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছিল, বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে দশমিক ৫ শতাংশ, আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায়। বছরের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে তা ছিল ২ দশমিক ২ শতাংশ, আগের বছরের শেষ প্রান্তিকের তুলনায়।

বাৎসরিক হিসেবে দেশটিতে জিডিপির হার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস থাকলেও এই সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রথম ত্রৈমাসিকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপির বার্ষিক গতি ২০২১ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের পর সর্বোচ্চ হলেও গত বছর কোভিড-১৯-এর কারণে সাংহাই ও অন্যান্য বড় শহরে কঠোর লকডাউনের কারণে দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষতি কম নয়।

সিডনির কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিবিদ ক্যারল কং বলেন, ‘এসব তথ্যে বোঝা যায়, চীনের কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক উল্লম্ফন এখন আর নেই।’
সম্প্রতি দেশে ও বিদেশে চাহিদা কমে যাওয়ায় দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে দেশটির রপ্তানি গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হয়েছে। সেই সঙ্গে সম্পত্তির বাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দাভাবের প্রভাবও পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে।

অর্থনৈতিক মন্দা কাটানোর জন্য বড় প্রকল্পে অর্থ ব্যয়, ভোক্তা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য আরও সহায়তা, সম্পত্তি নীতি সহজীকরণসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদেরা। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

এই বাস্তবতায় সবার দৃষ্টি এই মাসের শেষের দিকে সরকারি নীতিনির্ধারকদের বৈঠকের দিকে। এই বৈঠকে দেশটির শীর্ষ নেতারা বছরের বাকি অংশের জন্য নীতি নির্ধারণ করতে পারেন।

জরুরি নীতি সমর্থন

যদিও চীন তার ২০২৩ সালের জিডিপির পরিমিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার পথে আছে, কিছু বিশ্লেষক ধারণা করছেন, বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চীনের পরপর দুই বছর ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি আছে।

সিঙ্গাপুরের আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটসের এশিয়া এফএক্স স্ট্র্যাটেজির প্রধান আলভিন ট্যান বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশ হতাশাজনক সংখ্যা এবং স্পষ্টতই চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাচ্ছে।

আলভিন আরও বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই মন্থরগতি জিডিপির ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই তিনি মনে করেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জরুরি ভিত্তিতে নীতি পরিবর্তন করা উচিত।

বেশির ভাগ বিশ্লেষক বলছেন, ক্রমবর্ধমান ঋণের ঝুঁকি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। নীতিনির্ধারকেরা সীমিত আকারে নীতি পরিবর্তন করছে, যেন কোনো সিদ্ধান্ত আক্রমণাত্মক না হয়। এই অর্থনৈতিক মন্থর অবস্থার কারণে অনেকেই চাকরি হারাতে পারে এবং জ্বালানি মুদ্রাস্ফীতিজনিত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, যা বেসরকারি খাতের আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত শুক্রবার বলেছেন, এই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার জন্য জমার অনুপাত রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট রেশিও (আরআরআর) ও মধ্যমেয়াদি ঋণ সুবিধার মতো নীতি অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। এদিকে গত মাসে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার দশ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়েছে।

এদিকে জুন মাসে চীনের খুচরা বিক্রয় বেড়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ, যা মে মাসের ১২ দশমিক ৭ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। বিশ্লেষকেরা ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করেছিলেন।

শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির হার গত মাসে অপ্রত্যাশিতভাবে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে মে মাসে তা ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, কিন্তু কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এখনো যথেষ্ট আড়ষ্ট।

চীনে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। স্থানীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করার পরিবর্তে সঞ্চয়ে বেশি মনোযোগী; সেই সঙ্গে তারা ঋণ পরিশোধ করছে। বর্তমানে তরুণদের বেকারত্বের হারও বেড়েছে দেশটিতে।