আদানি গ্রিনে কাতারের বিনিয়োগ, আম্বুজা সিমেন্ট কিনল সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার

আদানি গ্রুপের কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ আসা শুরু হয় গত মার্চে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির সাম্রাজ্যে আবার কিছুটা সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। সম্প্রতি তারা বেশ বড় একটি বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। সেই সঙ্গে আরেকটি কোম্পানির শেয়ার কিনে নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, আদানির মালিকানাধীন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি আদানি গ্রিনে ৪৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে কাতারের এক সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে তারা আদানি গ্রিনের ২ দশমিক ৭ শতাংশ অংশীদারি কিনেছে।

এটি আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে কাতারের কোনো তহবিলের দ্বিতীয় বিনিয়োগ। এর আগে ২০২০ সালে কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথোরিটি আদানি ইলেকট্রিসিটিতে ৪৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ২৫ দশমিক ১ শতাংশ অংশীদারি কিনে নেয়।

কাতারের এই সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিলের আকার ৪৫ হাজার কোটি ডলার। তহবিল হিসেবে এটি অনেক বড়। ফলে এই সময় এ ধরনের একটি তহবিলের আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ আদানি গোষ্ঠীর ওপর আস্থার প্রতিফলন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে।

আদানি গোষ্ঠীর নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে এর আগেও বড় ধরনের বিনিয়োগ এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার নিবন্ধিত জিকিউজি পার্টনার্স হিনডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে আদানি গ্রিন এনার্জির ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ অংশীদারি কিনে নেয়। এই কোম্পানির বাজার মূলধন দেড় লাখ কোটি রুপি। এ ছাড়া ফ্রান্সের টোটাল এনার্জি আদানি গ্রিনের ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ মালিক।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে আদানি গ্রিনের মুনাফা বেড়েছে ৫১ শতাংশ। তাদের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৮ দশমিক ৩ গিগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে তারা ৪৫ গিগাওয়াট সক্ষমতা অর্জন করতে চায়।

এ বছরের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্ট সেলার ফার্ম হিন্ডেনবার্গের রিসার্চের প্রতিবেদনের পর আদানির সাজানো বাগানে রীতিমতো ঝড় বয়ে যায়। এই প্রতিবেদনের পর আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর হু-হু করে কমে যায়। গোষ্ঠীর বাজার মূলধন ১০০ কোটি ডলারের বেশি কমকে যায়।

সেই ঘটনার পর ঋণের বোঝা কমিয়ে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটা শুরু করেন আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানি। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন আম্বুজা সিমেন্ট সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজের অংশীদারি কিনে নিয়েছে। বস্তুত, হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদনের পর এটিই আদানির বৃহত্তম অধিগ্রহণ।

আম্বুজা সিমেন্ট জানিয়েছে, আদানি গোষ্ঠী সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজের রবি সঙ্ঘী ও পরিবারের কাছ থেকে ৫৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ অংশীদারি কেনা হয়েছে। সে জন্য তাদের ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি রুপি।

এখানেই শেষ নয়, শেয়ারবাজার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা আরও ২৬ শতাংশ শেয়ার কেনার পরিকল্পনা আছে তাদের। তাতে আরও ৭৬৭ দশমিক ১৫ কোটি রুপি খরচ হতে পারে। এই কেনাবেচা সম্পন্ন হলে সব মিলিয়ে সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজের ৮২ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেয়ার অম্বুজা সিমেন্টসের হাতে আসবে।

তবে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, এই অধিগ্রহণের রাজনৈতিক যোগসাজশ আছে। ভারতের তৃতীয় সর্ববৃহৎ সিমেন্ট উৎপাদক শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে অধিগ্রহণ নিয়ে কথা চলছিল সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজ়ের। বিরোধীদের দাবি, এই অধিগ্রহণের আলোচনা শুরু হওয়ার পরই শ্রী সিমেন্টের কার্যালয়ে আয়কর বিভাগ অভিযান চালায়। তার পর হঠাৎ করেই সেই দৌড় থেকে সরে দাঁড়ায় শ্রী সিমেন্ট।