যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ধনসম্পদ বেড়েছে। শেয়ারবাজারের ঊর্ধ্বগতি ও বাড়ির মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক সম্পদের মূল্য ১৫৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারে উঠেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শেয়ারের দামে পতন ও বাড়ির দাম কমে গিয়েছিল দেশটিতে। তবে মূল্যস্ফীতির হার কমার সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এতে দেশটির পরিবারের যে সম্পদমূল্য কমেছিল, তা পুষিয়ে গেছে।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ-জুন প্রান্তিকে দেশটির পারিবারিক ও অলাভজনক খাতের নিট সম্পদমূল্য ৪ শতাংশ বা ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার বেড়েছে। এর আগে বছরের প্রথম প্রান্তিকেও সম্পদমূল্য তিন লাখ কোটি ডলার বেড়েছিল, যদিও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়নি।
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বেড়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার। একই সময় আবাসন খাতের মোট সম্পদমূল্য বেড়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার।
পারিবারিক সম্পদের পরিমাণ এখন ২০২২ সালের প্রথম ভাগের তুলনায় দুই লাখ কোটি ডলার বেশি। সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, এতে ভোক্তারা স্বস্তি পাবেন, অর্থাৎ তাঁদের পক্ষে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য বেকারত্ব বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে ২০২২ সালের মার্চে থেকে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে ফেডারেল রিজার্ভ। গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে দেশটির আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেয়ারের দাম ও বাড়ির দাম কমেছে। তৈরি হয়েছিল মন্দার আশঙ্কা।
মুডিস অ্যানালিটিকসের বিশ্লেষকেরা এক নোটে লিখেছেন, শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক এই উত্থান সত্ত্বেও গত বছরের তুলনায় সম্পদ তেমন একটা পরিবর্তিত হয়নি, ফলে ব্যয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব সীমিত। এ ছাড়া মহামারির সময় যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা মানুষকে সম্পদমূল্য বৃদ্ধির ক্ষণস্থায়ীত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়।
শেয়ারবাজারের সঙ্গে মার্কিন অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস মনে করছে, আগামী এক বছরের মধ্যে মন্দা হওয়ার আশঙ্কা মাত্র ১৫ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৩৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং মন্দাও এড়ানো যাবে, এমন সম্ভাবনা বাড়ছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘এই পূর্বাভাস দেখে ভালো লাগছে।’ মন্দার আশঙ্কা এড়ানো প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।’
তবে অর্থনীতির উন্নতি হলেও মানুষ হোয়াইট হাউসকে তার কৃতিত্ব দিতে নারাজ। ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, জো বাইডেনের নীতির কারণে মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। সিএনএনের এক মতামত জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। যদিও আগের জরিপে এমন কথা বলেছিলেন ৫০ শতাংশ মানুষ।
এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাইডেনের পদক্ষেপ ৬৩ শতাংশ ভোটারের মনঃপূত নয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক জরিপ থেকে এটি জানা গেছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অনেক মার্কিন নাগরিকের পক্ষে তাল সামলানো কঠিন হচ্ছে বলেও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ এক লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, যা এই প্রথম।
জেসি পেনির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক রোজেন সিএনএনকে বলেছেন, কোম্পানির মূল গ্রাহক অর্থাৎ কর্মজীবী শ্রেণির গ্রাহকেরা এখন ক্রমবর্ধমান হারে ক্রেডিট কার্ডের ওপর নির্ভর করছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা বিল পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে সস্তা জিনিস খুঁজছেন।
রোজেন আরও বলেন, ‘আমেরিকার কর্মজীবীরা আমাদের গ্রাহক। তাঁরা শিক্ষক, যাঁরা আমাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন; আছেন নির্মাণশ্রমিকেরা, যাঁরা আমাদের বাড়িঘর নির্মাণ করছেন এবং চিকিৎসাকর্মী, যাঁরা আমাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রাহকেরা কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন।’