কেন চীনের মতো একটি অ্যাপ বানাতে চান ইলন মাস্ক

ইলন মাস্ক
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চীনের মানুষের দৈনন্দিন জীবন উইচ্যাটের মতো অ্যাপ ছাড়া একরকম অচল। শুধু তা–ই নয়, উইচ্যাটের মতো সুপার অ্যাপে না থাকা চীনে ‘ডিজিটাল মৃত্যুর’ শামিল।
উইচ্যাট মূলত স্মার্টফোনের বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ হলেও কার্যত এর মধ্যে অনেক অ্যাপ ভরে দেওয়া হয়েছে।

ফলে এই অ্যাপ দিয়ে বার্তা দেওয়া-নেওয়া থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম, অর্থ পরিশোধ, সাবস্ক্রিপশন, পরিষেবা মাশুল, খাদ্য সরবরাহ, বিমান ও ট্রেনের টিকিট, গাড়িভাড়া—এমন আরও অনেক কিছুই করা যায়।

ইলন মাস্ক এখন চাইছেন, টুইটারের নবরূপ এক্সকে তিনি পশ্চিমা বিশ্বে উইচ্যাটের মতো দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত করবেন। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহান্তে ইলন মাস্ক যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা হলো টুইটারকে নাম পরিবর্তন করে ‘এক্স’ রাখা। বিদায় দিয়েছেন টুইটারের সেই চিরপরিচিত নীল পাখিকে। এই এক্স শব্দের সঙ্গে ইলন মাস্কের বসবাস অনেক দিনের। তাঁর অনলাইন ব্যাংকিংয়ের নাম ছিল এক্সডটকম, ২০০০ সালে যা পেপালে পরিণত হয়।

এখন মাস্ক চাইছেন, এক্সকে উইচ্যাটের মতো একটি সুপার অ্যাপ বানাতে। টুইটার কেনার কিছুদিন আগে মাস্ক টুইট করে জানিয়েছিলেন, টুইটার কেনার মধ্য দিয়ে তাঁর সর্বকাজের কাজি–জাতীয় অ্যাপ বানানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। গত মঙ্গলবার মাস্ক আবার বলেন, ইতিমধ্যে টুইটারে ভিডিও কলের মতো সুবিধা যুক্ত হয়েছে, অর্থাৎ ইতিমধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে টুইটারে। আরও অনেক পরিবর্তন আসছে টুইটারে।

ইলন মাস্ক সে সময় আরও বলেছিলেন, ‘আগামী দিনগুলোয় আমরা সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা যুক্ত করব। টুইটার নামটা এখন আর জুতসই নয়, তাই আমরা নীল পাখিকে বিদায় জানাব।’

গত বছরে টুইটারের মালিকানা হাতে পাওয়ার আগেই মাস্ক টুইটারের কর্মীদের বলেছিলেন, টুইটার ভবিষ্যতে উইচ্যাটকে অনুসরণ করবে। তাঁর কথায়, ‘চীনে মূলত মানুষ উইচ্যাটের ওপর ভর করেই বেঁচে থাকে। দৈনন্দিন জীবনে এটি খুবই কার্যকর, ব্যবহারকারীবান্ধব। আমরা যদি সে রকম কিছু করতে পারি বা তার কাছাকাছি পর্যন্ত যেতে পারি, তাহলেও বিশাল সফলতা আসবে।’

উইচ্যাটের মালিক চীনের টেনসেন্ট। এই সুপার অ্যাপের নিজস্ব কিছু ছোট অ্যাপ আছে, আবার চীনের ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উইচ্যাটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১২০ কোটি মানুষকে সেবা দিচ্ছে।

প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ বেনেডিক্ট ইভান্স গার্ডিয়ানকে বলেন, পশ্চিমে উইচ্যাটের মতো কিছু নেই। ধরা যাক ফেসবুকের পরিচিতি দিয়ে সেই অ্যাপের মধ্যেই ওপেন টেবিল, উবার ও ডেলিভারুর মতো অ্যাপ ব্যবহার করা যায়, সে ক্ষেত্রে কফি ও টিউবের বিল একই অ্যাপ দিয়ে পরিশোধ করা যাবে।

তবে বিষয়টি পশ্চিমে এত সহজ হবে না বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিশ্লেষকেরা। পশ্চিমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বপ্রতিষ্ঠিত অনেক নাম আছে, যেমন ইন্টারনেট অনুসন্ধানের জন্য গুগল সার্চ, সামাজিক মাধ্যমের জন্য ফেসবুক, ই-কমার্সের জন্য অ্যামাজন। এই কোম্পানিগুলো মাস্কের হাতে নিজেদের গ্রাহক–অভিজ্ঞতা তুলে দেবে—এমন সম্ভাবনা খুবই কম।

চীনে এটা সম্ভব হয়েছ, কারণ সবাই উইচ্যাট ব্যবহার করে। আবার উইচ্যাট যখন সুপার অ্যাপ হয়েছে, তখন সেখানে অত কড়াকড়িও ছিল না। টুইটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুবই কম। টুইটার কেনার পর মাস্ক যত খ্যাপাটে কাজ করছেন, তাতে মাস্কের ওপর ভরসা করাও কঠিন।

এ ছাড়া অর্থ লেনদেনের সুবিধা চালু করতে হলে অনেক কর্মী প্রয়োজন। অথচ মাস্ক টুইটারের দায়িত্বভার নেওয়ার পর ৮০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছেন।

ইলন মাস্ক নিজেই সম্প্রতি জানিয়েছেন, টুইটারের ক্যাশ ফ্লো বা অর্থের প্রবাহ এখনো নেতিবাচক; যদিও মার্চে মাস্ক বলেছিলেন, জুনের মধ্যে কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো ইতিবাচক ধারায় আসবে। টুইটারের বিজ্ঞাপনী রাজস্ব ৫০ শতাংশ কমেছে এবং কোম্পানির ঋণ ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এ পরিস্থিতিতে মাস্কের আশা করে যেতে হবে যে মানুষ তাঁর অভিনবত্ব গ্রহণ করবে।