স্বল্প সুদে ৫ হাজার কোটি ডলার ঋণ দেবে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতি চাঙা করতে স্বল্প সুদে সরকারি নীতি বাস্তবায়নকারী ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় গত মাসে পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। ব্লুমবার্গকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, অর্থনীতি চাঙা করতে আবাসন ও অবকাঠামো খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে পিবিওসি এই পদক্ষেপ নিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পিবিওসি জানিয়েছে, প্লেজড সাপ্লিমেন্টাল লেন্ডিং (পিএসএল) কর্মসূচির আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৫৬ বিলিয়ন বা ৪৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার অঙ্গীকার করেছে, আগের মাস অর্থাৎ নভেম্বর পর্যন্ত যা ছিল ৪১ হাজার কোটি ডলার। ডিসেম্বর মাসে পিবিওসি ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে, যা ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ।
আবাসন খাতের গতি বাড়াতে ও সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধির হার স্থিতিশীল করতে পিএসএল বেইজিংয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। বাজারে প্রত্যাশা ছিল, সরকার এই তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে আবাসন নির্মাণে গতি আনবে। এতে আবাসন খাতে কয়েক বছর ধরে যে ধীর গতি দেখা যাচ্ছিল, তার অবসান হবে। এসব কারণে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে নেমেছে।
এর আগে নভেম্বর মাসে ব্লুমবার্গের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাশ্রয়ী আবাসন ও ক্ষুদ্র গ্রামগুলোর সংস্কারে দেশটির নীতিনির্ধারকেরা স্বল্প সুদে এক লাখ কোটি ইউয়ান ঋণ দেওয়ার কথা ভাবছেন। তাঁরা পিএসএল কর্মসূচির মাধ্যমে বা বিশেষ ঋণ দিতে চাচ্ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাকিং গ্রুপ লিমিটেডের চীনবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কৌশলবিদ জিং ঝাওপেং ব্লুমবার্গকে বলেন, অর্থনীতিতে অর্থ সঞ্চারের সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও দক্ষ মাধ্যম হচ্ছে পিএসএল। যে এক লাখ কোটি ইউয়ানের কথা বলা হয়েছে, অঙ্কটা তার চেয়ে বেশি হলে অর্থনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হবে।
জিং ঝাওপেং আরও বলেন, পিএসএলের কারণে অন্যান্য প্রণোদনা উঠিয়ে নেওয়া হতে পারে। পিএসএল ও এক বছরের মেয়াদি ঋণের কারণে তিনি মনে করেন না, নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকের নগদ অর্থ সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতায় ছাড় দেওয়া হবে।
নতুন বছরে চীন সরকারের বাজেট ঘাটতি মাত্র ৩ শতাংশে উঠতে পারে, যদিও বাজারের ধারণা ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। জিং ঝাওপেং বলেন, এই পিএসএল তহবিলকে আধা রাজস্ব ব্যয় হিসেবে দেখা যেতে পারে।
পিএসএলের ইতিহাস বিতর্কিত। এর আগে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এই হাতিয়ার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছিল। তখন বস্তির উন্নয়নে এই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে। তখন আবাসন খাতে গতি কমে গিয়েছিল, তার পালে হাওয়া লাগাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু একই কারণে তখন বাড়ির দামও বেড়ে যায়। অনেক অর্থনীতিবিদ পিএসএলকে হেলিকপ্টার মানি আখ্যা দেন।
এরপর ২০২২ সালে আবার পিএসএল ব্যবহার করা হয়। তখন চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য ৭৪০ বিলিয়ন ইউয়ান দেওয়া হয়। ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিএসএল ঋণ হিসেবে ৫০০ বিলিয়ন ইউয়ান দেয়।
চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহায়তাকারী চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গত মাসে ফুজিয়ান প্রদেশের গৃহনির্মাণে ঋণ দেয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যায়ে পিএসএল ঋণের সুদহার ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ, এটি এক বছর মেয়াদি ঋণের সুদহার ও ব্যাংকের আদর্শ সুদহারের চেয়ে কম।