১০ জন ধনীর সম্পদমূল্য বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার

মার্ক জাকারবার্গ ও ইলন মাস্ক
রয়টার্স

চলতি বছরের শেষ ত্রৈমাসিক চলে এসেছে। এখন পর্যন্ত চলতি বছর বিশ্বের ১০ জন শীর্ষ ধনীর সম্পদ অনেকটা বেড়েছে। এই তালিকায় এগিয়ে আছেন ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ ও জেফ বেজোস। মূলত শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ বছর তাঁদের সম্পদের দাম অনেকটা বেড়েছে। ফলে মন্দার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তার প্রভাব এঁদের সম্পদমূল্যে পড়েনি।

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বছর যাঁদের সম্পদমূল্য বেড়েছে, তাঁদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জনের সম্পদমূল্য বেড়েছে ৩৯৭ বিলিয়ন বা ৩৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সম্পদমূল্য বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এ বছর তাঁর সম্পদমূল্য বেড়েছে ৯৯ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। গতকাল রোববার এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্যানুসারে, ইলন মাস্কের সম্পদমূল্য ছিল ২২৮ বিলিয়ন বা ২২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ফলে বিশ্বের শীর্ষ ধনী হিসেবে তাঁর অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হয়েছে। এ বছর টেসলার শেয়ারের দাম বেড়েছে ১০৭ শতাংশ।

টেসলার ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক ইলন মাস্ক। ফলে শেয়ারের দাম ওঠানামার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের মূল্য বাড়ে ও কমে।

এরপর সম্পদ বৃদ্ধির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছেন মার্ক জাকারবার্গ। এ বছর তাঁর সম্পদমূল্য বেড়েছে ৬১ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ১৯০ কোটি ডলার। গতকাল রোববার এই প্রতিবেদন রেখার সময় মার্ক জাকারবার্গের সম্পদমূল্য ছিল ১০৯ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। মূলত মেটা প্ল্যাটফর্মের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৫১ শতাংশ।

সম্পদ বৃদ্ধির দিক থেকে তৃতীয় স্থানে আছেন জেফ বেজোস—চলতি বছর তাঁর সম্পদমূল্য বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার। সম্পদ বৃদ্ধির শীর্ষ দশের তালিকায় আরও আছেন গুগোলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন; ওরাকলের ল্যারি এলিসন; এনভিডিয়ার জেনসেন হুয়াং; মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী স্টিভ বালমার, মাইকেল ডেল ও স্প্যানিশ ব্যবসায়ী আমানিকো ওর্তেগা।

কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, ১০ জন শতকোটিপতির মধ্যে ৯ জনই প্রযুক্তি খাতের। অথচ ২০২২ সালে এই খাতের আয় কমে যাওয়ার কারণে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছিল। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কারণে এই খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে। এই তালিকায় প্রযুক্তি ব্যতীত অন্য খাতের একমাত্র প্রতিনিধি হলেন আমানিকো ওর্তেগা।

চিপ কোম্পানি এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম এ বছর ১৮৭ শতাংশ বেড়েছে, তার ওপর ভর করে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হুয়াংয়ের সম্পদমূল্য ২২ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২২০ কোটি ডলার বেড়েছে। বস্তুত, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম চলতি বছর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ইতিবাচক খবরে দেশটির কোম্পানিগুলোর আয় বেড়েছে। ফ্যাক্ট সেটের তথ্যানুসারে, চলতি বছর এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় আয় ৮ দশমিক ১ শতাংশ বাড়তে পারে; আগের বছর ২০২২ সালে যা ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ গত বছরের মার্চ মাস থেকে আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে। ধারণা করা হয়েছিল, তার অভিঘাতে চলতি বছর দেশটিতে মন্দাভাব দেখা দেবে।

কিন্তু সেই আশঙ্কা উড়িয়ে মার্কিন অর্থনীতি প্রত্যাশাতীতভাবে শক্তিশালী অবস্থানে। দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ভালো; বেকারত্বের হার রেকর্ড পর্যায়ে নেমে এসেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে, মার্কিন অর্থনীতি সব ঝড়ঝঞ্ঝা মোকাবিলা করতে পারবে।

সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মজুরিও বাড়ছে। সে কারণে ভোক্তা ব্যয়ও বেড়েছে। অর্থাৎ অর্থনীতি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা আছে। ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী।
এসব কারণে চলতি বছর বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদমূল্য অনেকটাই বেড়েছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন মোড় নিলে বা মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে ফেডারেল রিজার্ভ আবারও নীতি সুদহার বাড়ালে পরিস্থিতির আবার অবনতি হতে পারে। তবে আপাতদৃষ্টে যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের এখন পোয়াবারো।