মোদি যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সংবর্ধনা পাচ্ছেন, তবে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগও আছে

যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ঊষ্ণ সংবর্ধনা পাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি
রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার মোদির সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। দুই সরকারপ্রধানের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করা।

নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, রাজনীতিকদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও নরেন্দ্র মোদির সফরে নজর রাখছেন, ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নানা বাধা সত্ত্বেও বিশ্বের এই অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছেন মার্কিন ব্যবসায়ীরা। যদিও মার্কিন বিনিয়োগকারীদের কিছুটা উদ্বেগও রয়েছে।

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের এখন পর্যন্ত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের সঙ্গে সাক্ষাৎ। বৈঠকে মাস্ক বলেছেন, বিশ্বের অন্য যেকোনো বড় দেশের তুলনায় ভারত অনেক বেশি প্রতিশ্রুতিশীল। সেই সঙ্গে ভারত নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে বিপুল বিনিয়োগ করছে। তাই মাস্কের আশা, টেসলা শিগগিরই ভারতে ব্যবসা শুরু করবে। আরও সুনির্দিষ্টভাবে তিনি বলেছেন, ‘মানুষের পক্ষে যত দ্রুত ব্যবসা শুরু করা যায়, টেসলা তত দ্রুত ভারতে ব্যবসা শুরু করবে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও ভারতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত রাশিয়া ও পশ্চিম উভয়ের সুনজরে আছে। রাশিয়ার সস্তা তেল কিনে ভারত লাভবান হচ্ছে। সে কারণে মূল্যস্ফীতির হার কম রেখেই ভারত উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।
বিনিয়োগকারীরা ভারতে ভিড় করছেন, বড় ব্যবসায়ীরাও যাচ্ছেন। ভারতের শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওরও রমরমা ভাব—প্রযুক্তি খাত ও উদ্যোক্তাদের প্রাণস্পন্দনের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।

এদিকে ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নেওয়ার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত সরকার টুইটার বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডোরসে। কারণ, টুইটার কর্তৃপক্ষ সরকারের প্রতি সমালোচনামূলক কনটেন্ট সরাতে রাজি হয়নি। ভারত সরকার সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে গণতন্ত্র সূচকে ভারতের অবনমন হয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল ভারতে উৎপাদন বৃদ্ধি করলেও তাদের শুরুটা খুব ভালো হয়নি বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সংবাদ অনুসারে, চীনের কারখানায় উৎপাদিত ফোনের তুলনায় ভারতের কারখানায় উৎপাদিত আইফোনের ত্রুটি অনেক বেশি পাওয়া গেছে।

সেই সঙ্গে আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, ভারতের স্বজনতোষী পুঁজিবাদ ও হিসাব প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব। দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ছোট এক শর্টসেলার কোম্পানি হিনডেনবার্গ রিসার্চ ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্টক জালিয়াতির অভিযোগ তুললে রীতিমতো ঝড় বয়ে যায় আদানির সাজানো সাম্রাজ্যে। লন্ডভন্ড হয়ে যায় তাঁর এত দিনের সাজানো সংসার। সেই ঘটনায় আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন প্রায় অর্ধেক কমে যায়।

এত কিছু সত্ত্বেও ভারতে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তায় চিড় ধরছে না। এর রহস্য আর কিছু নয়, নিউইয়র্ক টাইমসে মনে করছে, মোদি সরকার তথ্য-প্রবাহ ব্যাহত করে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। বিশেষ করে সম্প্রচারভিত্তিক গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে এটি সত্য, টেলিভিশনের রাতের সংবাদ পাঠকেরা প্রতিনিয়ত নরেন্দ্র মোদির মহত্ত্বের গুণকীর্তন করছেন এবং যেকোনো সমালোচনা থেকে তাঁকে রক্ষা করছেন।