যুক্তরাজ্যে খাদ্যদরিদ্র শিশুর সংখ্যা এক বছরে দ্বিগুণ

যুক্তরাজ্যের খাদ্যদরিদ্র শিশুর সংখ্যা গত এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গবেষণার প্রতিষ্ঠানসহ ফুড ফাউন্ডেশনের তথ্যানুসারে, সে দেশে এখন খাদ্যদারিদ্র্যকবলিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। এ বাস্তবতায় স্কুলের খাদ্য কর্মসূচিতে আরও বেশিসংখ্যক শিশু অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান–এর।

ফুড ফাউন্ডেশনের জরিপে অংশ নেওয়া ২২ শতাংশ পরিবার বলেছে, গত জানুয়ারি মাসে তারা হয় এক বেলা খাবার কম খেয়েছে, অথবা ক্ষুধা পেটে ঘুমাতে গেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় যা ১২ শতাংশ বেশি। এটা হওয়াই স্বাভাবিক, কারণ যুক্তরাজ্যের খাদ্যমূল্যস্ফীতি এখন সর্বকালীন রেকর্ড ছুঁয়েছে—১৭ দশমিক ১ শতাংশ।

ফুড ফাউন্ডেশনের জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজন বলেছেন, যেসব পরিবার সরকারের নানা ধরনের সাহায্য–সহযোগিতা পাচ্ছে, সেসব পরিবারের শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত। অক্টোবর মাসে এ ধরনের ৭২ শতাংশ পরিবারের শিশুরা এই সুবিধা পেয়েছে। মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপের কারণে এই কর্মসূচি এখন সর্বজনীন করার চাপ তৈরি হয়েছে।

ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী আনা টেইলর দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘আমাদের তথ্য দেখা যাচ্ছে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থায় বড় ধরনের গলদ আছে।’ তবে তিনি মনে করেন, স্কুল খাদ্য কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হলে ক্ষমতাসীন সরকারের ভোট বাড়বে। ফলে সরকার তা ভেবে দেখতে পারে।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যে একধরনের রাজনৈতিক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, রাজধানী শহর লন্ডনের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিনা মূল্যে দুপুরের খাবার দেওয়া হবে।

এদিকে লন্ডনের ইসরিংটন, নিউহ্যাম, সাউথওয়ার্ক, টাওয়ার হ্যামলেট ও ওয়েস্টমিনস্টার অঞ্চলে ইতিমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিশুকে দুপুরের খাবার দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ওয়েলসের পরিকল্পনা হচ্ছে, ২০২৪ সালের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিশুর জন্য বিনা মূল্যে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা। স্কটল্যান্ডেও এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

কোভিডের কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যুক্তরাজ্য। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে আবার সেই তারাই সবচেয়ে ভুক্তভোগী হয়। ফলে উন্নত দেশ হলেও সেখানে এখন জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে অনেক মানুষের, বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এই বাস্তবতায় স্কুলে বিনা মূল্যে একটু দুপুরের খাবার দেওয়া হলে শিশুপ্রতি পরিবারের বার্ষিক ৪৪০ পাউন্ড বাঁচবে।

বর্তমানে ৮ লাখ দারিদ্র্যকবলিত শিশু বিনা মূল্যে দুপুরের খাবারের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। কারণ, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, যেসব পরিবারের বার্ষিক আয়কর দেওয়ার পরে ও সুবিধার পাওয়ার আগে ৭ হাজার ৪০০ পাউন্ড, কেবল সেসব পরিবারের শিশুরাই এ সুবিধা পাচ্ছে। ২০১৮ সালের পর এ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়নি, যদিও এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই বেড়েছে।

প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উলি শান দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘জ্বালানির উচ্চ দামের কারণে পারিবারিক অর্থনীতি দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত, জ্বালানির দাম বাড়লে সরাসরি পরিবারের জ্বালানি ব্যয় বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদনে জ্বালানির যে ব্যবহার হয়, তাতে এগুলোর দামও বেড়ে যায়। বিশেষ করে খাদ্যের দাম।’