বিরল পদক্ষেপে ডলারভিত্তিক আমানতের সুদহার কমিয়েছে চীন

মুদ্রা ইউয়ানের দরপতন ঠেকাতে নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে চীন

চীনা মুদ্রা ইউয়ানকে শক্তশালী করতে এক বিরল পদক্ষেপ নিয়েছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে থাকা এক স্বনিয়ন্ত্রিত সংস্থা। সংস্থাটি চীনের বড় বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ডলারভিত্তিক আমানতের সুদহার কমানোর কথা বলেছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত চারজন ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই খবর দিয়েছেন।

চীনা মুদ্রা ইউয়ানের মান ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। এই বাস্তবতায় উল্লিখিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে চীনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে রপ্তানিকারকেরা বিদেশি মুদ্রায় পাওয়া বিল ইউয়ানে নগদায়নে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক চীনা কোম্পানি ডলারে পাওয়া বিল জমিয়ে রাখছিলেন।

চীনের ব্যাংকগুলো ৫০ হাজার বা তার চেয়ে বেশি ডলারভিত্তিক আমানতের জন্য সুদহার এখন ৪ দশমিক ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যক্তি রয়টার্সকে এই তথ্য দিয়েছেন।

এই পরিবর্তন গত মঙ্গলবার কার্যকর হয়েছে। সূত্রগুলো রয়টার্সকে বলেছে, বড় ব্যাংকগুলো এখন ডলারভিত্তিক আমানতের জন্য যে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে, তা প্রায় ১০০ ভিত্তিপয়েন্ট হারে কমতে পারে।

নানা কারণে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দরপতন হচ্ছে। চীনের অর্থনীতির শ্লথগতি, যুক্তরাষ্ট্রের বন্ডের সুদহারের সঙ্গে চীনের বন্ডের সুদহারের ক্রমবর্ধমান পার্থক্য, দেশটির শেয়ারবাজারে বিদেশি কোম্পানিগুলোর স্টক বিক্রি করে দিয়ে মুনাফা তুলে নেওয়া—এ সবকিছুর সম্মিলিত ফল হিসেবে ইউয়ানের ওপর চাপ বাড়ছে।

জানুয়ারি মাসে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের দর অনেকটাই বেড়েছিল। কিন্তু চীন নিজেদের সীমান্ত আবার খুলে দেওয়ার পর ইউয়ান এশিয়ার অন্যতম দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হয়। সর্বশেষ হিসাবে, এক ডলারের বিপরীতে ৭ দশমিক ১১৯ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। ডলারের দর সাত ইউয়ান অতিক্রম করলেই বিষয়টি চীনের কর্তৃপক্ষের জন্য মনস্তাত্ত্বিক বিষয় হয়ে ওঠে। তখন তারা নানা ব্যবস্থা নেয়।

গত মাসে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দৃঢ়তার সঙ্গে বলে, মুদ্রার বিনিময় হারের এমন ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং সেই সঙ্গে ডলারভিত্তিক আমানতের সুদহার নির্ধারণে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা পর্যালোচনা করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—বিশ্বের বৃহত্তম এই দুই অর্থনীতিতে সুদহারের ক্রমবর্ধমান ব্যবধানের কারণে বিনিয়োগকারীরা এর সুবিধা নিচ্ছিলেন। বিনিয়োগকারীরা যেখানে সুদ কম সেখান থেকে ঋণ করে যেখানে সুদহার বেশি, সেখানে বিনিয়োগ করে মুনাফা করছিলেন।
চীনের মুদ্রা ইউয়ানের একজন ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, ডলারভিত্তিক আমানতের সুদহার হ্রাসের সিদ্ধান্তকে একটি পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে চাহিদা বাগে আনার পথ বেছে নেয়। ফলে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত আটবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। ডলারের বিনিময় হারও অনেকটা বেড়ে যায়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হয়েছে ঠিক, কিন্তু অন্যান্য দেশ কঠিন বিপদে পড়েছে। ডলারের দর বেড়েছে, ফলে তাদের ঋণ পরিশোধ ও আমদানি ব্যয়বহুল হয়েছে।