ভারতে শেয়ার বিক্রি করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন ভারতের শেয়ারবাজারের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। গত মে মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের বাজারে শেয়ার বিক্রি করে ২৫ হাজার ৫৮৬ কোটি রুপি তুলে নিয়েছে।

শুধু গত মাসেই নয়, চলতি বছরের শুরু থেকেই ভারতের বাজার নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তায় আছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২৫ হাজার ৭৪৩ কোটি রুপির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে তারা অবশ্য শেয়ার বিক্রি করেনি; বরং সে মাসে তারা ৩৫ হাজার ৯৮ কোটি রুপি বিনিয়োগ করে। মার্চ মাসে বিদেশিদের শেয়ার কেনা অনেকটা কমলেও তারা মোট ১ হাজার ৫৩৯ কোটি রুপি বিনিয়োগ করে। এপ্রিল মাসে তারা তুলে নেয় ৮ হাজার ৭০০ কোটি রুপি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য হিন্দু।

মে মাসেই ভারতের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্স ৭৫ হাজারের ঘর পেরিয়ে নজির স্থাপন করেছিল। এমনকি লেনদেন চলার সময় একদিন তা ৭৬ হাজারের ঘরও পেরিয়ে যায়। এরপরই অবশ্য আশঙ্কা গ্রাস করে বিনিয়োগকারীদের। বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম আসন পেতে পারে ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এনডিএ জোট। এর জেরে শুরু হয় পতন। গত সপ্তাহের প্রথম চার দিনে ১ হাজার ৫২৫ পয়েন্ট হারায় সেনসেক্স। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে অনিশ্চিত বাজার। বাজারের অস্থিরতা সূচকও বেড়ে যায়, এতে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন।

তবে ভারতের বুথফেরত সমীক্ষায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ক্ষমতায় ফিরবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাল মঙ্গলবার, অর্থাৎ ৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের ভোট গণনা শুরু হবে। সেই ইঙ্গিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আবার কবে থেকে বাজারে ফিরতে শুরু করেন, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

২০১৯ সালে বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশের পর সেনসেক্স বেড়েছিল ১ হাজার ৪২১ পয়েন্ট। এক দিনে বৃদ্ধির হিসাবে তা ছিল ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ; নিফটি বৃদ্ধি পায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

২০১৪ সালে ভোট গণনার দিন সেনসেক্স প্রথমবার ২৫ হাজারের মাইলফলক স্পর্শ করে। শেষে অবশ্য আগের দিনের থেকে মাত্র ২১৬ পয়েন্ট বেড়ে ২৪ হাজার ১২১ পয়েন্টে নেমে যায় এই সূচক।

গত অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ—এ খবরে বিনিয়োগকারীরা আশান্বিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের দাবি, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এভাবে ভারতের বাজারে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার আরেকটি কারণ আছে। সেটা হলো, চীনের বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ায় অনেকে আবার সেদিকে ঝুঁকছেন। চীন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে, সে কারণে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের পুরোনো প্রিয় বাজার চীনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। তাঁদের মনে আশাবাদ, অর্থনীতি চাঙা করতে বেইজিং যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তাতে চীনের শিল্প খাতের মুনাফা বাড়বে, উৎপাদনও বাড়বে।

বিনিয়োগকারীদের এই প্রবণতায় বোঝা যাচ্ছে, চীনের বাজারের বিষয়ে তাঁরা ক্রমেই আরও আশাবাদী হয়ে উঠছেন। ওয়াল স্ট্রিটের বড় ব্যাংকগুলো এখনো মনে করে, আগামী এক দশক বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার হবে ভারতের শেয়ারবাজার, যদিও বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির স্টক অতিমূল্যায়নের বিষয়ে সতর্ক। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে।

এদিকে এই টানাপোড়েনের মধ্যে গত মাসের শেষ দিকে ভারতের শেয়ারবাজারের মূলধন পাঁচ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বাজার–বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিএসই ও এনএসই—উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মোট মূল্য পাঁচ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, জাপানের মতো বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর কাতারে উঠে এসেছে ভারত। অর্থনীতিকে আরও চাঙা করার ক্ষেত্রে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই মাইলফলক অর্জনের কারণে বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানি ও বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়বে।