টাইটানিক, সমুদ্রের তলদেশ, মহাকাশ, এভারেস্ট—কোন ভ্রমণে কত খরচ

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাবমেরিন সরবরাহকারী কোম্পানি ওশানগেট নিখোঁজ সাবমেরিন ‘টাইটান’ পরিচালনা করে
ছবি: রয়টার্স

টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে এক ডুবোজাহাজের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে আরেকটি বিষয় সামনে এসেছে। সেটা হলো, এ ধরনের অভিযানের ব্যয় কত এবং কারা সাধারণত এ ধরনের চরম সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানে যান।

টাইটান নামের সেই ডুবোজাহাজে যে পাঁচজন আছেন, তাঁদের মধ্যে দুজন শতকোটিপতি। তাঁদের একজন হচ্ছেন ৫৮ বছর বয়সী ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং, যিনি ব্যক্তি পর্যায়ে জেট বিমান বিক্রি করে নিজের ভাগ্য গড়েছেন। এ ধরনের চরম সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানে অংশ নিয়ে এর আগে তিনবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন। আরেকজন শতকোটিপতি হচ্ছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ, যাঁর সঙ্গে ১৯ বছর বয়সী পুত্র সোলায়মানও আছেন।

দ্য গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, গত শনিবার এক ইনস্টাগ্রাম বার্তায় হামিশ হার্ডিং বলেন, রোববার ভোর চারটার সময় ‘শেষ পর্যন্ত’ সমুদ্রের ১২ হাজার ৫০০ ফুট নিচে যাওয়ার অভিযান শুরু হবে এবং ‘এটি ২০২৩ সালে সম্ভবত টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনের প্রথম ও একমাত্র মনুষ্য মিশন’।

হার্ডিং এবারই প্রথম সমুদ্রের তলদেশে যাননি, এর মধ্যে তিনি সমুদ্রের গভীরতম তলদেশে যাওয়ার রেকর্ড স্থাপন করেছেন। জায়গাটি হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্চ, পানির সমতল থেকে যেখানকার গভীরতা ৩৬ হাজার ফুট।

শুধু সমুদ্রের তলদেশেই নয়, হাডিং মহাকাশেও ভ্রমণ করেছেন। গত বছর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের সঙ্গে তিনি ব্লু অরিজিন নিউ শেফার্ড রকেটে চেপে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০৭ কিলোমিটার বা ৩ লাখ ৫১ হাজার ফুট ওপর থেকে ঘুরে এসেছেন।

তবে এসব অভিযান সস্তা নয়, অনেক অর্থ ব্যয় করে তবেই কেবল এ ধরনের অভিযানে যাওয়া যায়।

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে টাইটান ডুবোজাহাজে চড়ে যে পাঁচজন সমুদ্রের তলদেশে গেছেন, তাঁদের মাথাপিছু খরচ হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এই অভিযানের আয়োজক ওশেনগেট নামের এক কোম্পানি, যারা এ ধরনের চরম সাহসিকতাপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করে।

মার্কিন ধনী স্টকটন রাশ এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। তিনিও নিখোঁজ। সেই সঙ্গে আছেন ফরাসি ডাইভার পল অঁরি নারগেলট, যিনি এখন পর্যন্ত ৩০ বারের বেশি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গেছেন—ফলে তাঁর নামই হয়ে গেছে মি. টাইটানিক।

এই অভিযানের এক ভিডিও বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এটা কেবল শিহরণজাগানিয়া ভ্রমণ নয়, বরং আট দিনের এই অভিযান জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

এর আগে এই অভিযানে গেছেন অ্যারন নিউম্যান নামের এক সফটওয়্যার ব্যবসায়ী। তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘এটা ডিজনির রাইড নয়। এখানে যেমন অনেক ঝুঁকি আছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও আছে।’

অ্যারন নিউম্যান আরও বলেন, ‘জীবনে আমি যা করেছি, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম ও চিত্তাকর্ষক বিষয় ছিল এটি। আমি এভারেস্টেও গেছি, কিন্তু টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া আরও অনন্য বিষয়। সন্দেহ নেই, এটা আমার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা।’

তবে মহাকাশে ভ্রমণ সমুদ্রের তলদেশে ভ্রমণের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল। ব্লু অরিজিনের উড়ানে দুটি টিকিটের দাম ২৫ লাখ ডলার, যদিও টিকিটের মূল্য সম্পর্কে নিজেরা কিছু বলতে রাজি নয় কোম্পানিটি।

স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ পর্যটন কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাকটিকে চেপে ২ লাখ ৬০ হাজার ফুট উচ্চতায় ভ্রমণের টিকিটের মূল্য সাড়ে চার লাখ ডলার, যেখানে গেলে মানুষের ভর শূন্য হয়ে যায়। সেই টিকিট আট শতাধিক বিক্রি হয়েছে।

আরও কিছু এমন কোম্পানি আছে, যারা বিশ্বের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত মানুষকে নিয়ে যায়। দক্ষিণ মেরু ভ্রমণে নিয়ে যায় এমন একটি কোম্পানি হচ্ছে হোয়াইট ডেজার্ট অ্যান্টার্কটিকা, যার মালিক প্যাট্রিক উডহেড। দক্ষিণ মেরুতে নিয়ে যেতে তারা জনপ্রতি ৯৮ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত নেয়।

রোমাঞ্চকর ভ্রমণের আরেকটি জায়গা হচ্ছে এভারেস্ট পর্বতমালা। পর্বতারোহী গ্যারেট ম্যাডিসন জনপ্রতি ৯৩ হাজার ৫০০ ডলারে মানুষকে এভারেস্ট ভ্রমণে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন অনুষ্ঠান সিক্রেট লাইভস অব দ্য সুপার রিচে তিনি বেশ গর্ব করেই বলেন, তাঁর অতিথিরা ৮ হাজার ফুট উচ্চতায় গিয়েও গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। শুধু তা–ই নয়, বিশ্বমানের রাঁধুনিরা অতিথিদের টি-বোন স্টেক, ভেড়ার মাংসের চপ ও স্যামন ফিলেট খাওয়ান।

স্বাভাবিকভাবেই এসব শখের তোলা ৮০ টাকা, তবে প্রতিটি পয়সা উশুল হয়ে যায় বলেই মনে করেন গ্যারেট ম্যাডিসন।