এক বছরের গোপন আলোচনার পর ৫০০ বিমান কেনার চুক্তি

এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের বিমান কোম্পানি এয়ারবাস ও মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে প্রায় ৫০০ জেট বিমান কিনছে ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়া বৈশ্বিক বিমান সেবায় নিজেদের স্থান আরও পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে একসঙ্গে এতগুলো বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কাজটা তার জন্য সহজ হবে না বরেই মনে করছেন বিমান খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সেই সঙ্গে একসঙ্গে এতগুলোর বিমান কেনার আলোচনাপ্রক্রিয়া সম্পর্কে রয়টার্স বলেছে, টানা প্রায় এক বছর এ নিয়ে গোপনে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার স্থান ব্রিটেনের বাকিংহাম প্রাসাদের কাছাকাছি অবস্থিত টাটাদের এক হোটেলে। তারা আরও জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর উদ্‌যাপন করা হয়েছে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলের খাবার দিয়ে।

আলোচনাপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে এসব তথ্য দিয়েছেন।

গত বছরের গ্রীষ্মকালে এই আলোচনা শুরু হয়। বড়দিনের কয়েক দিন আগে চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত হয়। ডিসেম্বরই রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৫০০টি বিমান কেনার চুক্তি এই হলো বলে।

আর এসব আলোচনা হয়েছে বাকিংহাম প্রাসাদের কিছুটা দূরে অবস্থিত ভিক্টোরীয় রীতিতে নির্মিত বিলাসবহুল হোটেল সেন্ট জেমস কোর্টে। উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা এই হোটেল অবস্থান করেছেন।

এয়ার ইন্ডিয়ার আলোচনা-সক্ষমতা

কখনো কখনো মধ্যরাত অবধি এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের আলোচনা হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নিপুণ আগরওয়াল ও ট্রান্সফরমেশন বিভাগের প্রধান জোগেশ আগরওয়াল এই আলোচনায় নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী এক পক্ষের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেন, ‘এয়ার ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা খুবই দক্ষতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁরা বিশ্বের সেরা ব্যবসায়িক চুক্তি-আলোচকদের সমকক্ষ।’

আলোচনায় অংশ নেওয়া আরেক ব্যক্তি বলেছেন, ‘এয়ার ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা খুবই পদ্ধতিগতভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁদের আলোচনায় পরিশীলনের ছাপ ছিল। এ ছাড়া তাঁরা খুব কঠোরভাবে দর-কষাকষি করেছেন।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ চুক্তিতে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে জেনারেল ইলেকট্রিক। ইঞ্জিনের সিংহভাগই তারা সরবরাহ করবে। এয়ারবাস ৩২০ নিওসের ইঞ্জিন তারা দেবে। এ ছাড়া রোলস রয়েস ৪০টি এয়ারবাস এ ৩৫০-এর ইঞ্জিন সরবরাহ করবে। বলা হয়েছে, ১০ বছর ধরে জেনারেল ইলেকট্রিক বিমানের ইঞ্জিন তৈরিতে আরও এগিয়ে গেছে। সে কারণেই তারা বেশি কাজ পাচ্ছে।

এয়ারবাসের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ক্রিশ্চিয়ান শেরার রয়টার্সকে বলেছেন, এ চুক্তিতে ভারত সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার সঙ্গে টাটার বাণিজ্যিক উচ্চাভিলাষের যোগ আছে। অর্থাৎ তারা আন্তর্জাতিক যোগাযোগে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করবে।

জানা গেছে, মূলত মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতেই এয়ার ইন্ডিয়া এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে কাজটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন খাত–সংশ্লিষ্টরা। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের বিমান সংস্থাগুলোর সেবা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেক উন্নত। ফলে প্রতিযোগিতা করতে এয়ার ইন্ডিয়াকে আরও উন্নত সেবা দিতে হবে।

এয়ার ইন্ডিয়া একসময় ভারত সরকারের হাতে ছিল। কিন্তু অব্যাহত লোকসানের মুখে সরকার একসময় তা বেসরকারি খাতের হাতে ছেড়ে দেয়। ২০২১ সালে টাটা তা কিনে নেয়। তবে ৭০ বছর আগে এয়ার ইন্ডিয়া টাটার হাতেই ছিল। একপর্যায়ে সরকার তা কিনে নেয়।

সংস্থার নিয়ন্ত্রণ টাটাদের হাতে আসার পর থেকেই এটিকে লাভজনক করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে তারা।

কোন বিমান কতটা

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের কাছ থেকে প্রায় সমানসংখ্যক বিমান নেবে এয়ার ইন্ডিয়া। এর মধ্যে এয়ারবাস থেকে যে ২৫০ বিমান কেনা হবে, তার ২১০টি একক আইলের এ-৩২০ নিও এবং বড় আকারের ৪০টি এ-৩৫০ উড়োজাহাজ। ফ্রান্স ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।

আর বোয়িংয়ের কাছ থেকে কেনা বিমানের মধ্যে থাকবে ছোট আকারের ১৯০টি ৭৩৭ ম্যাক্স, ২০টি বড় আকারের ৭৮৭ ও ১০টি ৭৭৭ এক্স উড়োজাহাজ। যে চুক্তির আর্থিক মূল্য ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। হোয়াইট হাউসের পক্ষে জানানো হয়েছে, এ চুক্তি বোয়িংয়ের তৃতীয় বৃহত্তম। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতেমার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে আমেরিকার ৪৪টি প্রদেশে ১০ লাখের বেশি কর্মসংস্থানে তা সহায়তা করবে।’

এয়ারবাস ও এয়ার ইন্ডিয়া গত শুক্রবার এ চুক্তি সই করেছে। বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে গত ২৭ জানুয়ারি। এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য তারিখটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, এদিনই টাটা ৭০ বছর পর আবারও সাবেক এই রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার মালিকানা ফেরত পায়।