অক্টোবরে ভারত–মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা

আগামী ১ আগস্টের মধ্যে ভারত–মা্র্কিন বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে না। এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে এই চুক্তির ঘোষণা হতে পারে। অর্থাৎ আলোচনায় যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো আছে।

এদিকে ভারতীয় প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চম দফা আলোচনা শেষে শনিবার দেশে ফিরেছেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ভারত সফরে আসবে বলেও জানা গেছে।

সংবাদে বলা হয়েছে, আগস্টের মাঝামাঝি মার্কিন প্রতিনিধিদলের ভারতে আসার কথা। উভয় পক্ষই অস্থায়ী চুক্তি সই করতে দ্রুত কাজ করছে। লক্ষ্য হচ্ছে, ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না হলেও যেন সমঝোতা হয়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেন, ‘১ আগস্টের পরেও অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে, যদিও এই সময়সীমার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কঠোর। ওই দিন থেকেই সবাইকে নতুন পাল্টা শুল্ক দিতে হবে।’

এনডিটিভি আরও জানায়, ইস্পাত, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো ভারতের প্রধান রপ্তানি পণ্যে বড় ধরনের শুল্ক এড়াতে সময়মতো ‘ক্ষুদ্র চুক্তি’ হতে পারে। সূত্রগুলো বলছে, যদি এই ক্ষুদ্র চুক্তি সম্ভব না-ও হয় এবং ট্রাম্প প্রশাসন ২ এপ্রিল ঘোষিত ২৬ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করে, তাহলেও ভারতের ওপর তেমন একটা প্রভাব পড়বে না।

ইস্পাত শুল্ক ছাড়াও কৃষি ও গাড়ি শিল্প–সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সূত্র বলছে, দুগ্ধ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কছাড়ের দাবির বিষয়ে ভারত আরও কঠোর অবস্থানে গেছে। ভারত কোনো মুক্ত বাণিজ্য অংশীদারকেই এ ধরনের শুল্কছাড় দেয়নি।

ভারত অতিরিক্ত ২৬ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানিতে ৫০ শতাংশ এবং গাড়ি খাতে ২৫ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। টেক্সটাইলের মতো শ্রমনির্ভর খাতেও ছাড় চেয়েছে তারা।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট কিছু শিল্পপণ্য ও গাড়ি, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক যানবাহন, ওয়াইন, পেট্রোকেমিক্যাল ও কৃষিপণ্য আমদানিতে ছাড় চায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের অধিকার আছে ভারতের—যুক্তরাষ্ট্রকে এ কথা জানিয়েছে ভারত।

চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলেও ভারত এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেনি, যদিও তারা ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির শিকার হয়েছে।

এ পর্যন্ত যে কটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হয়েছে, তার মধ্যে ইন্দোনেশিয়া অন্যতম। চুক্তিতে ইন্দোনেশিয়ার শুল্ক ১৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ওই চুক্তি ঘোষণার সময় ট্রাম্প বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হওয়া এখন ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে যাচ্ছি...বুঝতে হবে, আগে আমাদের কোনো দেশেই প্রবেশাধিকার ছিল না। এখন শুল্কের কারণে আমরা সে সুযোগ পাচ্ছি।’

এ ছাড়া চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কিছু শর্ত দিয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত এ খবরও নাকচ করে দিয়েছে এনডিটিভির সূত্র। ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থ সব সময় ‘সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষিত’ থাকবে।

এ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানি ২২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার। আমদানি ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৮৬ কোটি ডলার।

সংবাদে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই অনুমোদিত হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরে এই চুক্তি অনুমোদিত হতে যাচ্ছে। ২৩ ও ২৪ জুলাই যুক্তরাজ্য সফরে থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই দিনের এ সফরে চুক্তি সই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আওতায় প্রায় ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্ক হ্রাস করা হবে। অর্থাৎ ভারতের ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্য যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত এবং যুক্তরাজ্য থেকে ভারতের ৯০ শতাংশ আমদানিও শুল্কমুক্ত থাকবে।

ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারত–মার্কিন অস্থায়ী চুক্তির আওতায় ভারতের পণ্যে শুল্কের হার ২০ শতাংশের নিচে নামতে পারে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় সুবিধাজনক জায়গায় থাকবে ভারত।

২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য মাত্র ১৯১ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার ১০০ কোটি ডলারের।