ফেরারি গাড়ি কেনার জন্য কেন এত অপেক্ষা করতে হয়

ফেরারির ২৯৬ জিটিবি মডেলের স্পোর্টস কার
ছবি রয়টার্স

অভিজাত শ্রেণির গাড়ি হিসেবে ইতালির গাড়ির ব্র্যান্ড ফেরারির বেশ সুনাম রয়েছে। বৈশিষ্ট্যে যেমন অনন্য, তেমনি দামেও বেশি। তবে মুশকিল হলো খুব বেশি পরিমাণে গাড়ি বাজারে ছাড়ে না কোম্পানিটি। এ জন্য গ্রাহকদের অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর।

সিএনবিসির খবরে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ফেরারি ১৩ হাজার ২২১টি গাড়ি তৈরি করেছে। এটি ২০২১ সালের তুলনায় সাড়ে ১৮ শতাংশ বেশি। তবে বাজারে ফেরারি গাড়ির চাহিদা সরবরাহের তুলনায় আরও অনেক বেশি। এ কারণে গ্রাহকদের পছন্দের গাড়িটি পেতে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

এই যেমন ফেরারির সরবরাহকারীরা জানিয়েছেন, ফেরারির পুরোসাংওয়ে স্পোর্টস ধরনের গাড়িটির জন্য অনেক গ্রাহক তিন বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষার তালিকায় রয়েছেন। অন্য কিছু মডেলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। পরিস্থিতি এমন যে অনেক গ্রাহক ভাবছেন, তাঁরা হয়তো ফেরারি কেনার অপেক্ষার তালিকাতেও উঠতে পারবেন না।

কিন্তু ফেরারি কেনার জন্য কেন এত অপেক্ষা করতে হয়? কেনই–বা বাজারে কম গাড়ি আনে কোম্পানিটি?

সম্প্রতি ফেরারির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেনেডিতো ভিয়না সিএনবিসিকে বলেন, ‘আমরা এমন একটি ব্র্যান্ড, যারা গাড়ির সংখ্যার দিকটা নিয়ে ভাবি না। আমাদের কাছে গাড়ির মূল্য ও গ্রাহকদের পছন্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ক্রেতাদের পছন্দের কারণ আমাদের গাড়িগুলো বৈশিষ্ট্যে অনন্য ও সংখ্যায় সীমিত।’ ফলে চাহিদা থাকলেও উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

এই মনোভাব যে সিইও ভিয়নার একার, তা নয়। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এনজো ফেরারি একবার বলেছিলেন, ফেরারি বাজারের চাহিদার তুলনায় কম গাড়ি উৎপাদন করবে। তবে বর্তমানে বাজারে ঘাটতি অনেক বেশি। তাই কিছু বিশ্লেষক বলেছেন, ফেরারি কোম্পানি চাইলে সহজেই উৎপাদন বাড়িয়ে দ্বিগুণ গাড়ি বিক্রি করতে পারে।

গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত ফেরারির শেয়ারের মূল্য ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। এটি অপর দুই কোম্পানি ফোর্ড বা জেনারেল মোটরসের চেয়েও বেশি। এ কারণে ফেরারির শেয়ারধারীদের কাছ থেকে আরও বেশি উৎপাদন ও বিক্রি বৃদ্ধির জন্য চাপ আসছে।

তবে ফেরারির সিইও ভিয়নার সাফ কথা, ‘আমরা চাইলে আরও কিছু বেশি গাড়ি বানাতে পারি। কিন্তু এর কোনো মানে হয় না। সেটা হলে আমাদের গ্রাহকদের অসন্তুষ্ট করব। তাই ফেরারি তার গাড়ি উৎপাদনের ওপর শক্ত লাগাম রাখবে বলে আশা করছি।’

ভিয়না আরও বলেছেন, ফেরারি গাড়ি কেনা কখনোই সহজ বা দ্রুত হওয়া উচিত নয়। কারণ, এটি চূড়ান্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী গাড়ি। যখন কেউ একটি ফেরারি গাড়ি কোথাও দেখে, তখন থেকেই তাঁর ফেরারি কেনার অভিজ্ঞতা শুরু হয়। এটি এমন কিছু নয়, যা আপনি খুব সহজে পেতে পারেন।

২০২৫ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি

ফেরারি তার হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য একটি নতুন কারখানা তৈরি করছে। ২০২৫ সালের শেষে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আনবে তারা। তবে এখান থেকে কী পরিমাণে গাড়ি তারা উৎপাদন করবে, অর্থাৎ তাতে গাড়ি উৎপাদন কতটা বাড়বে, তা স্পষ্ট নয়।

তবে সিইও ভিয়না বলেছেন, সীমিত সরবরাহ সত্ত্বেও তারা তরুণ ও নতুন গ্রাহকদের মধ্যে বাজার বাড়াতে চান। এক হিসাবে দেখা গেছে, ফেরারির গ্রাহকসংখ্যা টানা ১০ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ৪০ বছরের কম বয়সী নতুন গ্রাহকের সংখ্যা ৩০ শতাংশ।

তবে গাড়ি বিক্রি কমিয়ে আভিজাত্য ধরে রাখার দাবি করলেও ফেরারি পিছিয়ে আছে রেসিং প্রতিযোগিতায়। ফর্মুলা-১ অটো রেসিংয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রেড বুল, মার্সিডিজ ও অ্যাস্টন মার্টিনের পর চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফেরারি। এ বিষয়ে ভিয়না বলেন, ‘আমাদের রেসিং দলের প্রধান লক্ষ্য এখন গাড়ির উন্নতির দিকে নজর দেওয়া।’