মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি বেড়েছে ১৪ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাছবি: এএফপি

বাণিজ্যযুদ্ধের আবহের মধ্যেই মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। মূলত ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপ করবেন—এ আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকেরা মার্চ মাসে বিপুল পরিমাণে পণ্য আমদানি করেছেন। সে কারণে বাণিজ্যঘাটতি রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে।

সেই সঙ্গে বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যে দেশটির জিডিপির সংকুচিত হয়েছে, তার পেছনেও এই বিপুল পরিমাণ আমদানির প্রভাব আছে বলে সংবাদে বলা হয়েছে। মেক্সিকো, ভিয়েতনামসহ ১০টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র রেকর্ড পরিমাণ পণ্য আমদানি করলেও চীন থেকে আমদানি গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্চ মাসে দেশটির সামগ্রিক বাণিজ্যঘাটতি ১৪ শতাংশ বেড়ে ১৪০ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যদিও রয়টার্সের জরিপে জানা গিয়েছিল, বাণিজ্যঘাটতি ১৩৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র মার্চ মাসে ৪১৯ বিলিয়ন বা ৪১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে; এটি সর্বকালীন রেকর্ড। গত মাসে তারা রপ্তানি করেছে ২৭৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২৭ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারের পণ্য। সামগ্রিকভাবে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ছিল ৯১৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৯১ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের তুলনায় এই ঘাটতি বেড়েছে ১৭ শতাংশ।

ট্রাম্প মূলত বাণিজ্যঘাটতির হ্রাসের কথা বলে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন।

এদিকে আমদানি বৃদ্ধির সঙ্গে মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিও বেড়েছে। গত মাসে রপ্তানি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ২৭৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২৭ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ১৮৩ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ৩২০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, ২০২২ সালের জুলাই মাসের পর যা সর্বোচ্চ। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে শিল্পপণ্য ও উপকরণের বিক্রি বেড়েছে। এ ছাড়া গাড়ি, ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশের রপ্তানিও বেড়েছে। তবে মূলধনি পণ্যের রপ্তানি কমেছে, বেসামরিক বিমান রপ্তানি কমেছে ১৮০ কোটি ডলার।

পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতি ১১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ১৬৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।

গত মাসে দেশটি জানিয়েছে, বাণিজ্যঘাটতির কারণে প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপির ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশীয় পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে। সে কারণে বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি সংকোচন হয়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন অর্থনীতিতে আস্থা হারাচ্ছেন। সে কারণে তাঁরা মার্কিন ডলারে কেনা বন্ড ও শেয়ার ছেড়ে দিয়ে অন্য মুদ্রায় রূপান্তরিত করছেন। প্রমাণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, মার্চ মাসে দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি কমে যাওয়া। আরেকটি নজির হলো, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে মার্কিন নির্বাচনের পর বিনিয়োগকারীরা অফশোরে স্বর্ণ ও রুপার বুলিয়নে (বিশুদ্ধ ভৌত সোনা, যা সাধারণত বার (খণ্ড), ইনগট (ধাতুপিণ্ড) বা কয়েনের আকারে থাকে।) বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন।

মূলত ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।