সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে ‘সুইফট ইফেক্ট’, ঈর্ষায় অনেক প্রতিবেশী দেশ

মার্কিন গায়িকা টেলর সুইফটছবি: সংগৃহীত

টেলর সুইফট তাঁর গান, পারফরম্যান্স আর ইমেজের মাধ্যমে যে প্রভাব তৈরি করেছেন, সেটি পরিচিতি পেয়েছে ‘সুইফট ইফেক্ট’ হিসেবে। এই সুইফট ইফেক্ট এবার দেখা যাবে সিঙ্গাপুরে। টেলর সুইফট তাঁর ওয়ার্ল্ড ট্যুরের অংশ হিসেবে আসবেন এই নগররাষ্ট্রে। আর এ কারণে সিঙ্গাপুরে পর্যটনের যে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাতে প্রতিবেশী দেশগুলো কিছুটা হলেও ঈর্ষায় ভুগছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, টেলর সুইফট তাঁর ইরাস ট্যুরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে কেবল সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন। তাঁর গান শুনতে শহরের দর্শক ছাড়াও প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে দর্শক আসবেন। সব মিলিয়ে তিন লাখ সুইফট–ভক্ত ছয়টি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে মার্চের ২ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত এসব অনুষ্ঠান হবে।

ম্যানিলা থেকে আসছেন ইনগ্রিড ডেলগাদো। সদ্য স্নাতক পাস করা এই নারী মার্চের ৪ তারিখের কনসার্টে যোগ দেবেন। জানালেন, কেবল এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি ‘নতুন ঝকমকে’ একটি পোশাক কিনেছেন। কিন্তু তাঁর দুঃখ, নিজের সাধ্যের মধ্যে থাকার জন্য একটি ভালো হোটেল পাচ্ছেন না।

ইনগ্রিড ডেলগাদো বলেন, ‘বেশির ভাগ হোটেল বুক হয়ে গেছে। তাই আমাকে খুব দামি হোটেল বুক করতে হয়েছে।’

ফুলারটন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস এবং ফেয়াটন হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কনসার্টের সময়ে রুমের চাহিদা দারুণ বেড়েছে। যাঁদের অনেক টাকা, তাঁরা যাচ্ছেন মেরিনা বে স্যান্ডের বিলাসবহুল হোটেলে। এসব হোটেল আবার সুইফটের বিভিন্ন হিট গানের সঙ্গে মিলিয়ে প্যাকেজের নাম রেখেছে। যেমন ‘শেক ইট অফ’ এবং ‘স্টে স্টে স্টে’।

একটি হোটেলের ‘ওয়াইল্ডেস্ট ড্রিমস’ প্যাকেজে রয়েছে ভিআইপি টিকিট, খাবারদাবার, হোটেল সুইট, লিমোজিনে করে আসা–যাওয়া এবং বিভিন্ন পর্যটন স্পটের জন্য টিকিট। এই প্যাকেজের জন্য খরচ পড়বে ৫০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার, যা ৩৭ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। হোটেলটি জানিয়েছে, সব কটি প্যাকেজ বিক্রি হয়ে গেছে।

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ও মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর অভিমুখী ফ্লাইটের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু এটা কেবল ‘সুইফট ইফেক্ট’–এর কারণে কি না, তা তারা বলতে পারেনি। মালয়েশিয়া থেকে অনেকেই প্রতিবেশী সিঙ্গাপুরে আসবেন।

ফিলিপাইনের সেবু প্যাসিফিক তাদের সিঙ্গাপুরমুখী ফ্লাইট নম্বর পরিবর্তন করে ‘১৯৮৯’ রেখেছে। ওই বছরেই টেলর সুইফটের জন্ম এবং তাঁর পঞ্চম অ্যালবামের নামও এটি। ফ্লাইট নম্বর পরিবর্তনের বিষয়টি মার্চের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

রেড কার্পেট
তবে টেলর সুইফট কেবল সিঙ্গাপুরে কনসার্ট করবেন, এই বিষয়টি নিয়ে সবাই খুশি নন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ভক্ত ও সিঙ্গাপুরের প্রতিবেশী অনেক দেশের সরকার।

মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে সিঙ্গাপুরে যাওয়াই অনেক খরচের ব্যাপার। এরপর রয়েছে দামি হোটেল প্যাকেজ। সিঙ্গাপুরে সুইফটের এই রেকর্ড–ভাঙা ট্যুর পাওয়ার জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ অনুদানও দিয়েছে। সে কারণেও অনেকে অখুশি।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন ব্যাংককের একটি ব্যবসায়ী সম্মেলনে অভিযোগ করেন যে টেলর সুইফটের কনসার্টের জন্য সিঙ্গাপুর সত্যিই একটি চুক্তি করেছে। তবে সিঙ্গাপুর পর্যটন বোর্ডের কর্মকর্তারা এটা জানাতে রাজি হননি যে ঠিক কত অর্থ দিতে হয়েছে। তবে তাঁরা বলেছেন, সুইফটের কনসার্ট ‘সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য’ অবদান রাখবে।

কোভিড মহামারির বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর সিঙ্গাপুর অনেক শিল্পীর জন্য রেড কার্পেট বিছিয়েছে। এর মধ্যে ছিলেন ব্ল্যাকপিঙ্ক, হ্যারি স্টাইলস ও এড শিরান। জানুয়ারিতে কোল্ডপ্লে ছয়টি অনুষ্ঠান করেছিল। যেসব অনুষ্ঠানের সব টিকিট বিক্রিও হয়েছিল। এই শহরে আরও আসবেন ব্রুনো মারস, সাম ৪১ ও জেরি সেইনফেল্ড।

টাকা হারাবেন না
টেলর সুইফটের কনসার্টের জন্য গত বছর যখন টিকিট বিক্রি শুরু হয়, তখন লাখ লাখ মানুষ টিকিট কেনার জন্য হুড়োহুড়ি করেন। এসব ভক্তরা পরিচিত ‘সুইফটিজ’ হিসেবে। তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে অনলাইনে অনেক জালিয়াতির ঘটনাও ঘটে। সিঙ্গাপুরের পুলিশ তখন সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছেড়েছিল। শিরোনাম ছিল: ‘তাড়াহুড়ায় টাকা হারাবেন না, টিকিট কিনুন নিরাপদে’।

সেই সতর্কতায় কান দিয়েছিলেন কম মানুষই। জাকার্তার ২৫ বছর বয়সী এরিকো দিমাস পামুনকাস তিনটি ডিভাইস নিয়ে বসেছিলেন টিকিটের জন্য। তাঁর কথায়, ‘আমি খুবই ভাগ্যবান ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল, এই কনসার্ট হলো আমার জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোনো মুহূর্ত।’

টেলর সুইফট একজন সংগীতশিল্পী থেকে নিজেকে একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিণত করেছেন। এখন তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পপ তারকা। তাঁর ফ্যানরা বিশ্বাস করেন, ৩৪ বছর বয়সী এই নারীর কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে।

স্পেনসার লার সিঙ্গাপুরের একজন পাইলট। নিজের মেয়ে ও তাঁর বন্ধুদের জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে তিনি ২২ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর কথায়: ‘টেলরের অকপটতাকে আমি পছন্দ করি। অধিকার নিয়ে তাঁর কথাবার্তা, তাঁর উদারতা ও তাঁর সহানুভূতিশীলতাকে আমি তারিফ করি। মেয়েরা তাঁর কাছ থেকে এগুলো শিখতে পারে।’