৩৭ বছরে পাউন্ডের সর্বোচ্চ দরপতন  

একদিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে, আরেক দিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দরপতন চলছে। আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রয় কমে যাওয়ার কারণে দেশটি ইতিমধ্যে মন্দার কবলে পড়ে গেছে, এমন আশঙ্কায় ৩৭ বছরে পাউন্ডের সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। এ হার ১ শতাংশের বেশি।  

এর আগে আগস্ট মাসে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দরপতন হয়েছে ৫ শতাংশ। ২০১৬ সালের অক্টোবরে পাউন্ডের বড় ধরনের পতন হয়েছিল। তারপর এটিই ছিল সর্বোচ্চ দরপতন। এরপর গতকাল ৩৭ বছরের মধ্যে পাউন্ডের সর্বোচ্চ দরপতন হয়ে গেল।

 

বর্তমানে ১ পাউন্ডে ১ দশমিক ১৩ ডলার মিলছে। এর অর্থ হলো, বিদেশ ভ্রমণে ব্রিটিশ নাগরিকদের ব্যয়ের সক্ষমতা কমে যাওয়া। জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১ শতাংশ, যদিও আগস্ট মাসে তা ৯ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসে। গতকাল বিবিসির সংবাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়।

বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, মুদ্রার পতনের পেছনে মূল কারণ অর্থনৈতিক স্থবিরতা। যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা ব্যাপক মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছেন। সবকিছুর ওপর প্রভাব ফেলেছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি।

এ পরিস্থিতিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন ইংল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তাঁর প্রথম ও মূল কর্তব্য হচ্ছে মানুষকে জ্বালানির উচ্চমূল্যের বোঝা থেকে রেহাই দেওয়া। সে জন্য ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন।

লিজ ট্রাস পরিবারের জ্বালানি ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাতে পারিবারিক জ্বালানি ব্যয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ২ হাজার ৫০০ পাউন্ডের বেশি হবে না। স্বাভাবিকভাবেই এ জন্য সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে। বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, এ জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে ১৫০ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার কোটি পাউন্ড ঋণ করতে হবে। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ভর্তুকির পরিমাণ নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। ভর্তুকিকে এখনই অর্থের অঙ্কে পরিমাপ করতে চান না তিনি। বলেছেন, এখন সময়টা অস্বাভাবিক, তাই ব্যবস্থাও নিতে হবে সে রকম।

লিজ ট্রাসের এই পদক্ষেপের বড় দিক হলো, শুধু পরিবার নয়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও ভর্তুকি পাবে। তবে পরিবারের মতো তাদের দুই বছর ধরে এই ভর্তুকি দেওয়া হবে না, তারা ভর্তুকি পাবে ছয় মাসের জন্য। যদিও অনেকে আশা করেছিলেন, আরও কিছুটা সময়ের জন্য এই ভর্তুকি দেওয়া হবে।

ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের সবাই এই সহায়তা পাবেন আর উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য দেওয়া হবে সমপরিমাণ সহায়তা।

এদিকে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, চলতি বছরের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যে মন্দা দেখা দেবে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামগ্রিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অক্টোবর মাসে সে দেশের মানুষের অবস্থার আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইনভেস্টেকের সিনিয়র ইনভেস্টমেন্ট ডিরেক্টর লরা ল্যাম্বি বলেছেন, ‘বাকি বিশ্বের তুলনায় আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিশেষ ভালো দেখাচ্ছে না। বাজারে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা আছে।’

এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক গতকাল বলেছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা করছে তারা। সব মিলিয়ে অর্থনীতির অবস্থা ভালো দেখাচ্ছে না।