চীনের বাজারে আইফোন বিক্রিতে বিশাল ধস কেন

আইফোন ১৫রয়টার্স

চীনের দামি ফোনের বাজারে অ্যাপলের প্রাধান্য অনেক দিন থেকেই ছিল। অন্য কোনো কোম্পানি এমন কোনো ফোন উৎপাদন করতে পারেনি, যা অ্যাপলের আইফোনকে টেক্কা দিতে পারে বা ধনী ও বিশ্বজনীন নাগরিকের কাছে আইফোনের যে কদর, তার ব্যত্যয় ঘটাতে পারে।

কিন্তু বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে বোঝা যাচ্ছে, চীনের বাজারে অ্যাপলের সেই অবস্থান ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তার সেই আকর্ষণ হারিয়ে যাচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, চীনের ক্রেতারা সাধারণত বছরের প্রথম ছয় সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি নতুন ফোন কেনেন। স্বাভাবিকভাবে ফোনের বাজারের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্মার্টফোনের বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় সপ্তাহে চীনের বাজারে আইফোনের বিক্রি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ কমেছে।

একই সময়ে অ্যাপলের পুরোনো প্রতিযোগী হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। তাই চীনের বাজারে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অ্যাপল।

এ ছাড়া সম্প্রতি দুটি ধাক্কা খেয়েছে অ্যাপল—সংগীত স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা আইন ভঙ্গ করার দায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাপলকে ২০০ কোটি ডলার জরিমানা করেছে। পাশাপাশি অ্যান্টি–ট্রাস্ট আইন লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন সরকার কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

বহু বছর ধরে চীন অ্যাপলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার; যুক্তরাষ্ট্রের পরেই তার স্থান। অ্যাপলের ফোনের প্রায় ২০ শতাংশ বিক্রি হয় চীনের বাজারে। কিন্তু এখন নানা কারণেই চীনের বাজারে অ্যাপলের অবস্থান ক্ষুণ্ন হতে পারে বলে সংবাদে বলা হয়েছে। যেমন ভোক্তাদের ব্যয় কমে যাওয়া, মার্কিন কোম্পানির ফোন ব্যবহার না করার জন্য জনগণের ওপর সরকারের চাপ ও সর্বোপরি চীনের কোম্পানি হুয়াওয়ের পুনরুত্থান।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেকইনসাইটের জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিন্ডা সুই টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, চীনের বাজারে অ্যাপলের স্বর্ণ সময়ের অবসান হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই পরিণতির অন্যতম কারণ হলো, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান লড়াই। এই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে না কমলে অ্যাপলের পক্ষে চীনের বাজারের হৃত আসন পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে।

সংবাদে বলা হয়েছে, মার্কিন-চীন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে অ্যাপলের মতো আর কোনো মার্কিন কোম্পানিকে এতটা ভুগতে হয়নি।

সাংহাইভিত্তিক বিশ্লেষক লুকাস ঝং বলেন, পাঁচ বছর আগে এমন পরিস্থিতি ছিল যে নতুন আইফোন বাজারে আসার আগে মানুষ অ্যাপলের দোকানের সামনে তাঁবু খাটিয়ে রাতভর অপেক্ষা করেছে। অ্যাপল গত সেপ্টেম্বর মাসে আইফোন ১৫ বাজারে এনেছে; এই ফোনের বাজারজাতকরণ নিয়ে অতটা উত্তেজনা মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। বরং আইফোন ১৫-এর জনপ্রিয়তা আইফোনের আগের সংস্করণগুলোর ধারেকাছেও নয়।

এ বিষয়ে অবশ্য অ্যাপল গণমাধ্যমকে কিছু বলতে চায়নি। অ্যাপল ২০০৯ সাল থেকে চীনের বাজারে আইফোন বিক্রি করছে। এর আগে ২০১৯ সালে যখন অ্যাপল হুয়াওয়ের কাছে বাজারে হারাতে শুরু করেছিল, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প হুয়াওয়ে ও চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে প্রকারান্তরে অ্যাপলের সুবিধা করে দিয়েছিলেন।

এই নিষেধাজ্ঞা একভাবে হুয়াওয়ের জন্য শাপেবর হয়েছে। মার্কিন প্রযুক্তি না পেয়ে তারা নিজেরাই চিপ ও অপারেটিং সিস্টেম তৈরিতে মনোযোগ দেয় এবং এখন সেই সফলতা তারা পেতে শুরু করেছে।