কোনো রকমে মন্দা এড়াল যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের দুর্দশার যেন শেষ নেই। শুরু হয়েছিল ব্রেক্সিট দিয়ে, এরপর অন্যান্য ঘটনার ধাক্কায় তার জের চলছেই—করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি। বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, গত বছরের শেষ প্রান্তিকেই দেশটি মন্দার কবলে পড়বে। কিন্তু একদম কানের কাছ দিয়ে বেরিয়ে গেছে বুলেট।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে দেশটির অর্থনীতি কোনোভাবে মন্দা এড়াতে পেরেছে। কিন্তু অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়নি। অর্থাৎ সংকোচন ও মন্দা এড়াতে পারলেও শেষমেশ খাদের কিনারায় গিয়ে ঝুলে আছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি।

যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) তথ্যানুসারে, গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির ছিল শূন্য। এর আগে তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির সংকোচন হয় শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। সেই তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সাধারণত, পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে মন্দা শুরু হয়েছে বলা হয়।

যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, মন্দার মুখে না পড়লেও এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয় দেশ।

গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সামগ্রিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি না হলেও ডিসেম্বর মাসে তা ছিল ঋণাত্মক-মাইনাস শূন্য দশমিক ৫। ফলে স্বস্তিতে নেই দেশটির সরকার ও রাজস্ব বিভাগ।

চ্যান্সেলর জেরমি হান্ট বলেছেন, মূল্যস্ফীতি এখনো বড় সমস্যা, দেশের লাখ লাখ পরিবার ভোগান্তির মুখে পড়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে এখনো মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। তবে সম্প্রতি খুব ধীরগতিতে তা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৫, যা ৪০ বছরের মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ। এর আগে গত অক্টোবরে ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখে পড়ে যুক্তরাজ্য। ওই সময় মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ১ শতাংশে ওঠে। ফলে দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়াতে বাধ্য হয়েছিল ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। এ বছর আরও কয়েকবার নীতি সুদহার বাড়ানো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্তত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ যত দিন নীতি সুদহার বাড়াবে, তারাও বাড়াবে।

এ ছাড়া ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আশঙ্কা করছে, চলতি বছর মন্দার মুখে পড়তে পারে যুক্তরাজ্য। গত সপ্তাহে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানায়, চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক থেকেই মন্দায় পড়বে যুক্তরাজ্য, যা শেষ প্রান্তিক পর্যন্ত থাকবে। তবে এর ব্যাপ্তি ও নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা কমবে।

জি–৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাজ্যই চলতি বছর প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে তাদের পূর্বাভাস। একই পূর্বাভাস দিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।

তবে আইএমএফ বলছে, ২০২৪ সালে ঘুরে দাঁড়াতে পারে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। সেই বছর শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

ভিন্নমতও আছে। দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (এনআইইএসআর) বলছে, সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেশি থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সম্ভবত এ বছর মন্দা এড়িয়ে যেতে পারবে। এনআইইএসআর বলছে, এ বছর যুক্তরাজ্যের শূন্য দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২৪ সালে হবে ১ শতাংশ।

সংস্থাটির মতে, চলতি বছরে যুক্তরাজ্যে প্রতি চার পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার অর্থাৎ প্রায় সাত মিলিয়ন পরিবার খাদ্য ও জ্বালানি ব্যয় মেটাতে পারবে না, আগের বছরে যা ছিল পাঁচ পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকা। এসব অঞ্চলের অর্থনীতি গতি হারালে বা মন্দার মুখে পড়লে উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও তার প্রভাব পড়ে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দেশের রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় চলে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। তবে পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি মন্দা হলে বা প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেলে রপ্তানি আবারও কমতে পারে।