মাঝারি মাত্রায় বাড়বে চীনের অর্থনীতি, এ বছরের লক্ষ্য ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

করোনা মহামারির কারণে দফায় দফায় বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল চীন। এতে বিভিন্ন প্রদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে আসে, প্রবৃদ্ধিও কমে যায়। সেই অবস্থা থেকে এখন বের হয়ে আসছে চাইছে দেশটি। এ জন্য চলতি অর্থবছরে (২০২৩) মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ‘প্রায় ৫ শতাংশ’ প্রবৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। খবর সিএনএনের।

চীনের আইনসভা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) বার্ষিক অধিবেশনের উদ্বোধনের সময় গতকাল শনিবার দেশটির বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং এ তথ্য জানান।

লি কেছিয়াং বলেন, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে চীনের অর্থনীতি বর্তমানে একটি পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে। একই সঙ্গে আরও প্রবৃদ্ধির জন্য বিপুল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

এনপিসির উদ্বোধনী অধিবেশনে সারা দেশের তিন হাজার প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁদের সামনে খসড়া বাজেটসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিবেদন পেশ করা হয়। তাতে দেশটিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি বেকারত্ব কমার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের শহরাঞ্চলে নতুন করে ১ কোটি ২০ লাখ নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

খসড়া বাজেটে ২০২৩ সালের জন্য চীনের সামরিক বাজেট সম্পর্কেও জানানো হয়েছে। তাতে দেখা যায়, চলতি বছর দেশটির সামরিক খাতের বরাদ্দ ৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২২ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার করা হয়েছে।

দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বাড়ানো এবং তাইওয়ান ও হংকং ইস্যুতে কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বলয়ের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে চীনের। উভয় পক্ষই মাঝেমধ্যে সামরিক মহড়া দিচ্ছে ওই অঞ্চলে। ফলে চলতি বছর চীনের সামরিক ব্যয় কিছুটা যে বাড়বে, তা অনুমিতই ছিল। তারই প্রতিফলন দেখা গেছে খসড়া বাজেটে।

করোনার কারণে ২০২০ সাল থেকে চীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। ২০২২ সালে তা ৩ শতাংশে নেমে আসে। মূলত ‘শূন্য কোভিড নীতি’র কারণে দেশটিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যায়। সরবরাহব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয় ও কারখানাগুলোয় উৎপাদন কমে যায়। এর প্রভাব পরে প্রবৃদ্ধিতে।

সেই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় রয়েছে দেশটি। গত ডিসেম্বরে শূন্য কোভিড নীতি থেকে বের হয়ে আসে চীন। এতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে শুরু করে। গত বুধবার প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, চীনের কারখানাগুলোর কার্যক্রম ফেব্রুয়ারি মাসে গত প্রায় ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছে। সেবা ও সরবরাহ খাতও ভালো করেছে।

অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টি উঠে এসেছে ঋণমান যাচাইকারী বৈশ্বিক সংস্থা মুডিস-এর পূর্বাভাসেও। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে চীনের জন্য ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে মুডিস। গত বছর তা ৪ শতাংশ ছিল।

তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ অনুমান করেছিলেন যে চলতি অর্থবছরের জন্য আরও বেশি (৫ শতাংশের বেশি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে উচ্চাভিলাষী চীন। তবে সে রকম কিছু খসড়া বাজেটে দেখা যায়নি।

এ ছাড়া আগামী মঙ্গলবার চলতি বছরের প্রথম দুই মাসের আমদানি ও রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করবে চীন। এটি থেকেও বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের অবস্থানের একটি ধারণা পাওয়া যাবে।

এদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের জন্য সুখবর থাকলেও বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও দুর্বল হবে বলে বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে। এর মূল কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিভিন্ন দেশে ক্রমবর্ধমান সুদের হার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল গত জানুয়ারিতে জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে।