কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি, নজর এখন ফেডারেল রিজার্ভের দিকে
বছরের প্রথম তিন মাস টানা বৃদ্ধির পর এপ্রিল মাসে কিছুটা কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির সূচক। হ্রাসের হার উল্লেখযোগ্য না হলেও এই খবর দেশটির নীতিনির্ধারক ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ; আগের মাস, অর্থাৎ মার্চ মাসে যা ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার এ তথ্য প্রকাশ করে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভ এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নীতি সুদহার কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, তেমন সম্ভাবনা কম। যদিও সারা বিশ্বের নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীরা এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের এই খবরের জন্য অপেক্ষা করছেন, অর্থাৎ কবে সেখানে মূল্যস্ফীতির সূচক কমবে এবং ফেড নীতি সুদহার কমাবে।
গত বছরের জুলাই মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তেলের দাম বাড়লে সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। এতে কাজও হয়; ২০২২ সালের জুন-জুলাই মাসে সে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা ৩ শতাংশের ঘরে, যদিও ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ।
ধারণা করা হচ্ছিল, চলতি বছর একাধিকবার নীতি সুদহার কমাবে ফেডারেল রিজার্ভ। বছরের প্রথম প্রান্তিক, অর্থাৎ মার্চ মাস থেকেই সেই ধারা শুরু হবে। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকলে ফেড আর সেই পথে হাঁটেনি।
এদিকে বুধবার প্রকাশিত আরেক সরকারি প্রতিবেদনে জানা যায়, এপ্রিল মাসে সে দেশের মানুষের ব্যয় বাড়ে বা কমেনি। এতে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে যে অর্থনীতি দুর্বল হতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে দেশটির বড় খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ক্রেতারা বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা ব্যয় কাটছাঁট করতে শুরু করেছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, খুচরা বিক্রি কমে যাওয়ার প্রবণতা নজরে রাখতে হবে। ক্রেতাদের ব্যয় কমে যাওয়া মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য ভালো; কিন্তু ব্যয় কমার এই প্রবণতা বেশি ধীর হয়ে গেলে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান চার্লস শোয়াব ইউকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ফ্লিন বলেছেন, মূল্যস্ফীতির এই সর্বশেষ পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে যে নীতি সুদহারে তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তন আনা হবে, তিনি সেটা মনে করেন না।
রিচার্ড ফ্লিন আরও বলেন, ‘ফেডের কর্মকর্তারা বরাবরই বলে আসছেন, এখন যে নীতি সুদহার আছে, মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে তা যথেষ্ট; এবং এরপর ফেড যে পদক্ষেপ নেবে, সেটা হলো সুদহার কমানো।’ তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে এটাও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ফেডের কর্মকর্তারা সুদহার কমানোর তাড়ায় নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার এখন ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হলেও মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী রয়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অংশত এর কারণ হলো, মহামারির সময় বাড়ির মালিকেরা যে অতি নিম্ন হারে বন্ধক রেখে পুনঃ অর্থায়নের সুবিধা পেয়েছিলেন, সেটা। ফেডারেল রিজার্ভ তখন বন্ধকের সুদহার প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছিল। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে মার্কিন নাগরিকদের আর্থিক ভিত্তি নানাভাবে শক্তিশালী হয়েছে, সে কারণে তাঁদের হাতে এখন সঞ্চয় আছে এবং খুব একটা ঋণ করতে হচ্ছে না।
মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল হাতিয়ার হলো নীতি সুদহার নির্ধারণ। এই সুদহারের দ্বারা ঋণের সুদহার নির্ধারিত হয়। অর্থনীতির গতি কমানোর প্রয়োজন হলে ফেড বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই হাতিয়ার প্রয়োগ করে, অর্থাৎ নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরে। আবার অর্থনীতিতে গতি আনার প্রয়োজন হলে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়।