ঝুঁকি নিয়ে বাজিমাত করেছে নেটফ্লিক্স

নেটফ্লিক্সছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

গত বছর বড় এক ঝুঁকিপূর্ণ বাজি ধরেছিল নেটফ্লিক্স। তবে সেই ঝুঁকি তাদের জন্য কাল হয়নি, বরং সফলতার কারণ হয়েছে।

সিএনএন জানিয়েছে, নেটফ্লিক্সের যে ব্যবহারকারীরা অন্যদের পাসওয়ার্ড দিতেন, তাঁদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট খুলতে বাধ্য করাই ছিল সেই ঝুঁকি। ধারণা করা হয়েছিল, এতে নেটফ্লিক্সের গ্রাহক কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, উল্টো গ্রাহক আরও বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বের অন্যতম বড় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের গ্রাহক বেড়েছে ৯০ লাখ। ফলে তাদের গ্রাহকসংখ্যা রেকর্ড ২৬ কোটি ৯৬ লাখে উঠে গেছে।

ডিজিটাল বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গ্রাহক পেয়েছে নেটফ্লিক্স। এর অর্থ হচ্ছে, পাসওয়ার্ড ভাগাভাগির পরিমাণ মানুষের ধারণার চেয়েও বেশি ছিল; অর্থাৎ এই বিনা পয়সার গ্রাহকদের অর্থের বিনিময়ে গ্রাহকে পরিণত করেছে নেটফ্লিক্স।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ওয়াল স্ট্রিটসহ সবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গ্রাহক পেলেও গত বছরের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় তা কম। সেই প্রান্তিকে নেটফ্লিক্সে ১ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক যুক্ত হয়েছিল। এদিকে বৃহস্পতিবার নেটফ্লিক্স জানিয়েছে, ২০২৫ সাল থেকে তারা প্রতি প্রান্তিকে কত গ্রাহক যুক্ত হচ্ছে, সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে না।

এদিকে বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৯৩৭ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করেছে নেটফ্লিক্স; এই সময় শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৫ দশমিক ২৮ ডলার। এই আয় ওয়াল স্ট্রিটের অনুমানকে ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার লেনদেনের মূল সময়ের পরবর্তী অধিবেশনে নেটফ্লিক্সের স্টকের দাম কমেছে।

বিশ্লেষকেরা বলেন, অতীতে নেটফ্লিক্সের প্রবৃদ্ধি ও সফলতার মূল কারণ ছিল পুরোনো ধাঁচের ব্যবসায়িক মডেল। সম্প্রতি মুনাফা বৃদ্ধিতে তারা ব্যবসায়িক মডেলে বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে।

নেটফ্লিক্সের প্রতিদ্বন্দ্বী, যেমন ডিজনি প্লাস, হুলু, ম্যাক্স, পিকক মৌলিক অনুষ্ঠান তৈরি করে গ্রাহকদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু নেটফ্লিক্স এখন আর এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তারা খেলা সম্প্রচার থেকে শুরু করে ভিডিও গেমস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তৈরি অনুষ্ঠানের লাইসেন্স কেনায় বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করছে। এত দিন তারা বিজ্ঞাপনমুক্ত ছিল। কিন্তু সেই সময় শেষ হয়ে আসছে, তারা এখন বিজ্ঞাপন নেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে নেটফ্লিক্সের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্রেগ পিটার্স বলেছেন, ২০২৫ সাল থেকে কতজন গ্রাহক অর্থের বিনিময়ে অ্যাকাউন্ট করেছেন, প্রান্তিকভিত্তিক সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে না।

গ্রেগ পিটার্স আরও বলেন, ‘আমাদের বিকাশ হচ্ছে; এই বিকাশ চলমান থাকবে। রাজস্ব আয়ের নতুন মডেল তৈরিতে বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে সদস্যদের জন্য অতিরিক্ত সেবা যুক্ত করা হবে। এসব বিষয় কেবল কত মানুষ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করবে না। যদিও যত মানুষ এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে, তাদের সবার প্রভাব অনুভূত হবে।’

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কনটেন্ট বা অনুষ্ঠানের কল্যাণে নেটফ্লিক্সের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। গত বছর এসেছিল জনপ্রিয় অ্যানিম ওয়ান পিসের লাইভ অ্যাকশন; আট পর্বের সিরিজ নির্মাণ করেছিল তারা। লাইভ অ্যাকশন যে সম্ভব, অনেকেই তা বিশ্বাস করেনি, যদিও নেটফ্লিক্স শেষমেশ তা করে দেখিয়েছিল। সে কারণেই তারা অ্যাভাটার দ্য লাস্ট এয়ারবেন্ডারে হাত দিয়েছিল, যদিও এই সিরিজটি তেমন একটা সাড়া পায়নি।

এরপর তারা হাত দিয়েছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের বিশ্বখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউডে’; উপন্যাসটি অবলম্বনে ১৬ পর্বের সিরিজ নির্মাণ করছে নেটফ্লিক্স। ভালো হোক বা মন্দ, ধারণা করা হচ্ছে, এই এক সিরিজের কল্যাণে আরও অনেক নতুন গ্রাহক যুক্ত হবে।

এ ছাড়া জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘থ্রি বডি প্রবলেম’, ‘দ্য জেন্টলম্যান’, ‘লাভ ইজ ব্লাইন্ড’, ‘ফুল মি ওয়ান্স’, ‘ড্যামসেল’ ইত্যাদি। ডকু ড্রামা ‘মোজেস’ও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কনটেন্ট নির্মাণে বা প্রচারে নেটফ্লিক্স পিছিয়ে নেই, সেটাই হয়তো তাকে এগিয়ে রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।