এবার বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ বেচতে চায় ভারতের আদানি গ্রুপ

আদানি গ্রুপফাইল ছবি: রয়টার্স

নতুন করে বাংলাদেশে আরও বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায় ভারতীয় আদানি গ্রুপ। এবার তারা বাংলাদেশের কাছে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রি করতে আগ্রহী। ভারতে আদানির সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করতে ঢাকায় এসে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন গ্রুপটির কৃষি, তেল ও গ্যাস অংশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রণব বিনোদ আদানি।

সচিবালয়ে গতকাল বুধবার পাঁচ সদস্যের দল নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করে প্রণব বিনোদ আদানি তাঁকে এ আমন্ত্রণ জানান। অর্থমন্ত্রীও তাঁর সুবিধাজনক সময়ে আদানির সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন বলে সম্মত হয়েছেন। অর্থ বিভাগ সূত্র এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে আদানি গ্রুপের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা অনিল সারদানা, এস বি খিলিয়া, বিপুল যাদব ও অভিষেক তিয়াগি উপস্থিত ছিলেন। আর বাংলাদেশের দিক থেকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের জানান, ‘আদানি এরই মধ্যে বাংলাদেশে অনেক বিনিয়োগ করেছে, আরও করতে চায়। আমরা বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই।’

প্রণব বিনোদ আদানিও সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে অনেক সুযোগ রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করার বিষয়ে আমরা কী ভূমিকা পালন করতে পারি, তা নিয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধ নিয়েও প্রসঙ্গক্রমে আলোচনা হয়েছে। আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৭ সালে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি (পিপিএ) করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। চুক্তির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে আদানিকে দিতে হবে ৯৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অলস বসিয়ে রাখলে চুক্তি অনুযায়ী তাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়, সেটাকেই ক্যাপাসিটি চার্জ বলা হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে চুক্তির শর্তগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন এবং প্রয়োজনে বাতিলের পরামর্শ দিয়েছিল। বিপিডিবি নিজেও পিপিএর সংশোধন চেয়েছিল। কিন্তু আদানি রাজি না হওয়ায় তা আর হয়নি।

আদানির সঙ্গে করা পিপিএ বাংলাদেশের পরিবর্তে আদানির স্বার্থের অনুকূলে হয়েছে বলে অনেকে সমালোচনা করেন। আবার আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার ‘বেশি দাম’ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল বিপিডিবি।

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। জাতীয় সংসদে চলতি মে মাসে উপস্থাপন করা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিপিডিবির কাছে পাবে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার সমান মার্কিন ডলার। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত হিসাব যোগ করলে আদানির পাওনার পরিমাণ আরও বাড়বে। বিদ্যুৎ বিভাগের কাছ থেকে অর্থ বিভাগ ধারণা পেয়েছে, আদানির মোট পাওনার পরিমাণ এরই মধ্যে ৭০ কোটি ডলার।

জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতে তারা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চেয়েছে এবং বুঝতে পেরেছে যে এ সময়ে বাংলাদেশ তাদের পুরো পাওনা পরিশোধের বাস্তবতায় নেই। তাই তারা অতটা চাপ দিতে চায়নি। শুধু বলেছে, পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাংলাদেশ যেন পাওনা পরিশোধের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখে।

আদানি গ্রুপের পাওনা অর্থ পরিশোধ নিয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বকেয়া নিয়ে আদানির পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই। আর পাওনা থাকলে তা দিতে হবে না?’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদানির সঙ্গে চুক্তিটিই প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এর খসড়া তৈরি করে নিয়ে এসেছিল, আমরা পরে শুধু স্বাক্ষর করেছি। বিদেশি কোম্পানিকে ডেকে এনে লাভবান করে দেওয়ার এমন নজির বিশ্বের কোথাও নেই।’

শামসুল আলম বলেন, ‘আদানি বিদ্যুতের নতুন প্রস্তাব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন শুনলাম। আমরা কি তাদের কাছে থেকে কিনতে চেয়েছি? যা বুঝতে পারছি, তারা বাকিতে হলেও বিদ্যুৎ বেচবে। কত লাভ! অবাক লাগে, এগুলো দেখার মতো কেউ নেই। আমার তো মনে হয় বিদ্যুৎ খাতের পরিণতি পাট খাতের মতো হতে যাচ্ছে।’