কেন বিপুল সংখ্যায় চীনা শেয়ার বিক্রি করছে পশ্চিমা হেজ ফান্ডগুলো

প্রতীকী ছবি

বিশ্বের বড় বড় হেজ ফান্ড আগ্রাসীভাবে চীনের স্টক ছেড়ে দেওয়া শুরু করেছে। দেশটির আবাসন খাত নিয়ে নতুন করে সৃষ্ট উদ্বেগ ও দুর্বল অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের কারণে তারা এ কাজ করছে বলে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

হেজ ফান্ড হলো এমন তহবিল, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং ঝুঁকি নিয়ে ওই অর্থ পুনরায় বিনিয়োগ করে। এর বিনিময়ে এসব ফান্ড সাধারণত বড় ধরনের মুনাফা অর্জন করে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেজ ফান্ডগুলো সব ধরনের শেয়ারই বিক্রি করছে। তবে এ শ্রেণির (যে শেয়ার সাধারণত জনসাধারণের কাছে বিক্রি করা হয় না) শেয়ারই বেশি বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ফান্ড যত শেয়ার বিক্রি করেছে, তার ৬০ শতাংশই এ শ্রেণির।

হেজ ফান্ডগুলো কেবল তাদের মালিকানাধীন শেয়ার বিক্রি করছে, তা-ই নয়; বরং চীনের বাজার ভালো যাবে বা মন্দ যাবে—এ ধরনের পূর্বাভাস থেকেও সরে আসছে। এর অর্থ হলো, চীনের বাজার সম্পর্কে তারা মোটেও ভালো ধারণা পোষণ করছে না। হেজ ফান্ডগুলোর এ অবস্থানের কারণে চীনের বাজার পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

শেয়ারবাজারের গত ১০ অধিবেশনে হেজ ফান্ডগুলো চীনের বাজারে যত শেয়ার বিক্রি করেছে, তার নজির গত বছরের অক্টোবরের পর এই প্রথম। এমনকি গত পাঁচ বছরে হেজ ফান্ডগুলো শেয়ার বিক্রিতে এতটা তৎপর হয়নি বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে।

মূলত চীনের অর্থনীতিতে যে অনিশ্চিত পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তার জেরেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

জুলাই মাসে চীনের আমদানি-রপ্তানি উভয়ই কমেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে গত মাসে চীনের মূল্যস্ফীতি হয়েছে নেতিবাচক। মুদ্রার দরপতন হচ্ছে, আবাসন খাতে আবারও তৈরি হয়েছে ঋণ সংকট। এ পরিস্থিতিতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করতে নীতি সুদহার কমিয়েছে।

চীনের আবাসন খাতের বৃহত্তম বেসরকারি কোম্পানি কান্ট্রি গার্ডেন বন্ডের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে চাইছে। এখানেই শেষ নয়, ঝংগ্রং ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্ট কোম্পানি ইতিমধ্যে দু-একবার ঋণ খেলাপ করেছে। আবাসন খাতে তাদের বড় বিনিয়োগ আছে।

চীনের জিডিপির ৩০ শতাংশ আসে আবাসন খাত থেকে। এ কারণে এ খাত দেশটির অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে দেশটির রাষ্ট্রীয় আবাসন কোম্পানি এভারগ্র্যান্ড ঋণ খেলাপি হয়ে পড়লে আবাসন খাতে সংকট দেখা দেয়। সেই জের এখনো চলছে।

পশ্চিমা হেজ ফান্ডগুলো চীনের কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়ে ক্রমেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দেওয়া তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেজ ফান্ড যেমন কোয়াটু, ডি১ ক্যাপিটাল ও টাইগার গ্লোবালের মতো প্রতিষ্ঠান বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের স্টক মার্কেটে তাদের ঝুঁকি হ্রাস করেছে। অর্থনৈতিক ঝুঁকির সঙ্গে সঙ্গে ভূরাজনৈতিক ঝুঁকিও তাদের এ সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে।